যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভ দমনে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। সম্প্রতি, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ছাত্র মাহমুদ খলিলকে আটকের পর এই পদক্ষেপ আরও জোরদার করা হয়েছে। খবর অনুযায়ী, খলিলের গ্রিন কার্ড বাতিল করা হয়েছে এবং তিনি বর্তমানে লুইসিয়ানার একটি অভিবাসন কেন্দ্রে বন্দী আছেন।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা করেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগের কারণে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান ও চুক্তি বাতিল করা হতে পারে। দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য ফেডারেল এজেন্সিগুলো যৌথভাবে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, প্রশাসনের ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ সংক্রান্ত সংজ্ঞা গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় সংস্কার আনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য গঠিত জুডিশিয়াল বোর্ড বাতিল করা।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তবে, কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি এবং কোনো জিনিসপত্রও সরিয়ে নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, মাহমুদ খলিলের মুক্তির দাবিতে নিউইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে বিক্ষোভ করেছে ‘জুইশ ভয়েস ফর পিস’ নামের একটি সংগঠন। বিক্ষোভকারীরা ‘আমাদের নামে নয়’ লেখা টি-শার্ট পরে এবং ‘ইহুদিরা বলছে, মানছি না’ লেখা ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদে অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীরা জানায়, তারা পুরিম উৎসবের সময় এই প্রতিবাদ জানাচ্ছে, যা রানী এস্টারের প্রতি সম্মান জানায়, যিনি রাজার কাছে গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা তাদের পূর্বপুরুষদের শিক্ষা অনুসরণ করে কর্তৃপক্ষের এই ধরনের কার্যক্রমের প্রতিবাদ করছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আদালতে মামলা হয়েছে। খলিলের আইনজীবীর দাবি, সরকারের এই পদক্ষেপের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। তিনি আরও বলেন, “এই তরুণ ছাত্রকে, যিনি বাবা হতে যাচ্ছেন, তাকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে বন্দী করা হয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করার জন্য কাজ করছে দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। জানুয়ারিতে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ দমনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এই আদেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও কর্মীদের ভিসার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের ওপর নজরদারি করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং একাডেমিক স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়টি এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে, সরকারের পদক্ষেপগুলো বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং মানবাধিকার নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন