ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ‘খেলার’ সুযোগ দেওয়া যাবে না, এমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার। আসন্ন ইউরোপীয় নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে তিনি এই মন্তব্য করেন।
পশ্চিমী দেশগুলোর জোট ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং’-এর একটি বৈঠকের আয়োজন করছেন স্টারমার। এই জোটের সদস্য দেশগুলো ইউক্রেনকে রুশ আগ্রাসন থেকে রক্ষায় সহায়তা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কমে যাওয়ায় জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি ইউক্রেন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে নেওয়ার পর রাশিয়ার পক্ষ থেকে দ্বিধাগ্রস্ত প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রস্তাবটির সঙ্গে একমত পোষণ করলেও এর কিছু অসম্পূর্ণতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
শনিবারের ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনের আগে স্টারমার পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বিলম্বিত করার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব এখন কথার ফুলঝুরি নয়, বরং পদক্ষেপ দেখতে চায়। আমরা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হওয়া চুক্তি নিয়ে খেলার সুযোগ দিতে পারি না। ক্রেমলিন ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করছে, যা প্রমাণ করে যে পুতিন শান্তি চায় না।’
ডাউনিং স্ট্রিটের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্টারমার শনিবারের আলোচনায় ইউরোপীয় ও ন্যাটো মিত্রদের ওপর ‘রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানোর’ এবং ‘পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আনতে বাধ্য করার’ জন্য চাপ সৃষ্টি করবেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং’-এর বৈঠকে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। স্টারমার এই জোটকে ইউক্রেন চুক্তি রক্ষা এবং তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের পর শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত একটি সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই জোটে ইউরোপীয় দেশ, ইইউ কমিশন, ন্যাটো, কানাডা, ইউক্রেন, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডসহ ২৫টি দেশ রয়েছে।
ডাউনিং স্ট্রিট আরও জানায়, স্টারমার মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানাবেন, ‘দীর্ঘমেয়াদে ইউক্রেনে একটি ন্যায়সংগত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সমর্থন দিতে প্রস্তুত থাকতে এবং রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান হামলার বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষার জন্য ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।’ স্টারমার বলেন, এটি অর্জনের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে ‘যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করতে প্রস্তুত থাকতে হবে, যাতে শান্তি বজায় থাকে’।
ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাব দেখা গেলেও, শান্তি রক্ষার জন্য ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে কিছু দেশের অনীহা এখনো বিদ্যমান।
এদিকে, শুক্রবার ট্রাম্প জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে তিনি ‘খুব ভালো খবর’ পেয়েছেন। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি আরও বলেন, তার প্রশাসন উভয় দেশের সঙ্গেই ‘খুব ভালো আলোচনা’ করেছে।
অন্যদিকে, ট্রুথ সোস্যাল-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, ‘এই ভয়াবহ, রক্তাক্ত যুদ্ধের অবসান ঘটার খুব ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।’ বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তার প্রশাসন সোমবারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-প্রস্তাবিত অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে ‘আরও কিছু জানতে পারবে’।
বৃহস্পতিবার, রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে পুতিনের বৈঠক হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই বৈঠককে ‘সতর্ক আশাবাদ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুর্স্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকায় অনেকেই মনে করছেন, পুতিন সম্ভবত অঞ্চলটি সম্পূর্ণরূপে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আসার জন্য যুদ্ধবিরতি আলোচনার সময়ক্ষেপণ করছেন।
যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই আকাশপথে হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মতে, গত রাতে রাশিয়া ১৭৮টি ড্রোন এবং দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এতে কমপক্ষে ২ জন নিহত এবং ৪৪ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুইজন খেরসন অঞ্চলের বাসিন্দা। রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও আবাসিক ভবনগুলোতে আঘাত হানে, যার ফলে সাতটি বহুতল ভবন এবং ২৭টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গত রাতে ১২৬টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে। যদিও তাদের প্রতিরক্ষা ভেদ করে কতটি ড্রোন আঘাত হেনেছে, সে বিষয়ে তারা কিছু জানায়নি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন