মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান দলের মধ্যে রাশিয়া বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। এক সময়ের “শীতল যুদ্ধের” কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত এই দলটি কিভাবে ধীরে ধীরে রাশিয়ার প্রতি নরম মনোভাব দেখাচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে এই পরিবর্তন বিশেষভাবে চোখে পড়েছে।
সম্প্রতি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে ডেমোক্র্যাটদের উল্লাস এবং রিপাবলিকানদের নীরবতা ছিল লক্ষণীয়। ট্রাম্প যখন ইউক্রেনকে কয়েক বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দেওয়ার কথা বলেন, তখন ডেমোক্র্যাটরা ইউক্রেনের পতাকা নিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন, কিন্তু রিপাবলিকানদের মধ্যে নীরবতা দেখা যায়। এই ঘটনা রিপাবলিকানদের মানসিকতার পরিবর্তনের একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এক সময়ের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতি গ্রহণকারী এই দলটি এখন রাশিয়াকে আলিঙ্গন করতে চাইছে, যা বিশ্ব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রিপাবলিকানদের এই পরিবর্তন অত্যন্ত দ্রুত হয়েছে এবং তারা ট্রাম্পের এই পরিবর্তনের সঙ্গে সহজে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। ট্রাম্পের নেতৃত্বে অনেক রিপাবলিকান রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি সমর্থন দেখাচ্ছেন। এমনকি, ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে “একনায়ক” বলেও মন্তব্য করেছেন, যদিও পুতিনের ক্ষেত্রে তিনি এমন কোনো শব্দ ব্যবহার করেননি।
রিপাবলিকান দলের এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন, “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির প্রতি আনুগত্য এবং ট্রাম্পের প্রতি ভয় কাজ করছে। তরুণ রিপাবলিকানরা ন্যাটো (NATO) এবং জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তারা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের “ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধের” ধারণাকে সমর্থন করেন। রক্ষণশীল এই দল মনে করে, রাশিয়া তাদের আদর্শিক মিত্র।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতি এই সমর্থনের কারণ হিসেবে শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদের ধারণা কাজ করছে বলেও অনেকে মনে করেন। ট্রাম্প, রাশিয়ার সমালোচকদের “উগ্র বামপন্থী” এবং “পশ্চিমা বিশ্বের” “জাগরণ” (woke) সংস্কৃতির বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাদের মতে, রাশিয়া হলো শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদের একটি আদর্শ রূপ।
তবে, সব রিপাবলিকান যে রাশিয়ার প্রতি সমর্থন দেখাচ্ছেন, তা নয়। মিচ ম্যাককনেল, থম টিলিস এবং রজার উইকারের মতো প্রবীণ সিনেটররা এখনও ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু তাদের প্রভাব কমে আসছে বলে মনে হয়। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৪১ শতাংশ রিপাবলিকান রাশিয়াকে “বন্ধু” বা “মিত্র” হিসেবে মনে করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রিপাবলিকান দলের মধ্যে এই পরিবর্তন বিশ্ব রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের এই পরিবর্তিত মনোভাব আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যেকার সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান