যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ট্রাম্প প্রশাসন ৪০টির বেশি দেশের নাগরিকদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বিবেচনা করছে। সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু অভ্যন্তরীণ নথির বরাত দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এই খবর প্রকাশ করেছে। জানা গেছে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণ দেখিয়ে ভিসা স্থগিত করা হতে পারে অথবা ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হতে পারে।
প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, এই তালিকায় থাকা দেশগুলোকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম গ্রুপে থাকা ১০টি দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, ইরান, সিরিয়া, কিউবা ও উত্তর কোরিয়া। দ্বিতীয় গ্রুপে আছে ৫টি দেশ। এই দেশগুলো হলো – ইরিত্রিয়া, হাইতি, লাওস, মিয়ানমার এবং দক্ষিণ সুদান। এই দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য পর্যটন, শিক্ষার্থী এবং অভিবাসন ভিসা স্থগিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় থাকতে পারে। তৃতীয় গ্রুপে আছে ২৬টি দেশ। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বেলারুশ, পাকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান। এই দেশগুলোর সরকার যদি ৬০ দিনের মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘাটতিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের নাগরিকদের জন্য ভিসা দেওয়া স্থগিত করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
তবে, এই তালিকা এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারকো রুবিওসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের অনুমোদনের পর এতে পরিবর্তন আসতে পারে। গত ২০শে জানুয়ারী তারিখে জারি করা এক নির্বাহী আদেশের ধারাবাহিকতায় এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। ওই আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে, বিদেশি নাগরিকদের ভিসা এবং প্রবেশের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা যাচাই প্রক্রিয়া জোরদার করার কথা বলা হয়েছে।
এর আগে, ২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর নাগরিকদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। তখন এটিকে ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এছাড়া, ২০১৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্দিনোতে ইসলামিক স্টেটের হামলার পর ট্রাম্প মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়েছিলেন।
নতুন এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবনা আসলে, এটি হবে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি কঠোর করার প্রতিশ্রুতিরই ধারাবাহিকতা। গত অক্টোবর মাসে তিনি গাজা উপত্যকা, লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী অন্য যেকোনো স্থান থেকে আসা মানুষের উপর বিধিনিষেধ আরোপের অঙ্গীকার করেছিলেন।
অন্যদিকে, এই প্রস্তাবনার পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি নতুন সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত অভিবাসীদের বিতাড়িত করারও পরিকল্পনা করছে। এদের মধ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলার ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’, এল সালভাদরের ‘এমএস-১৩’ এবং মেক্সিকান-আমেরিকান ‘১৮ স্ট্রিট’ গ্যাংয়ের সদস্যরা।
একই সময়ে, ট্রাম্প প্রশাসন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, মাহমুদ খলিলসহ বেশ কয়েকজন বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিলের পদক্ষেপ নিয়েছে। মাহমুদ খলিল গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাস আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এছাড়া, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লেকা কোর্দিয়াকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যিনি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তিনি ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করেছেন। এছাড়াও, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী, ভারতীয় নাগরিক রঞ্জনি শ্রীনিবাসনের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের দাবি, তিনি হামাসকে সমর্থন করতেন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোভ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও অধ্যয়নের জন্য ভিসা পাওয়া একটি বিশেষ সুযোগ। যারা সহিংসতা ও সন্ত্রাসের পক্ষে কথা বলে, তাদের এই সুযোগ বাতিল করা উচিত এবং তাদের এই দেশে থাকার কোনো অধিকার নেই।’
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান