মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা (IRS)-এ কর্মীদের ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তবে এর সরাসরি প্রভাব এখনো দেশটির করদাতাদের ওপর পড়েনি। কর পেশাদারদের মতে, কর দাখিল এবং রিফান্ড প্রক্রিয়াকরণ এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
তবে কর্মীদের এই পরিবর্তনের কারণে কর সংক্রান্ত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে বিলম্ব হচ্ছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্বের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, আইআরএস-এর গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে শীর্ষ কর্মকর্তারা সরে গিয়েছেন, যার মধ্যে কমিশনার ড্যানি ওয়ারফেল এবং তাঁর স্থলাভিষিক্ত ভারপ্রাপ্ত কমিশনারও রয়েছেন।
ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৬,৭০০ প্রবেশন কালীন কর্মচারী চাকরিচ্যুত হয়েছেন (যদিও একটি ফেডারেল বিচারকের প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞার ফলে তারা সম্ভবত শীঘ্রই তাদের চাকরি ফিরে পেতে পারেন)। এছাড়া, প্রায় ৫,০০০ কর্মচারী ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া পদত্যাগ করার প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।
একটি খসড়া পরিকল্পনা অনুসারে, মে মাসে আরও প্রায় ৬,৮০০ কর্মীকে ছাঁটাই করা হতে পারে।
কর্মীদের এই পরিবর্তনের পাশাপাশি, আইআরএস-এর ডেটা সিস্টেমে নজিরবিহীন প্রবেশাধিকার পাওয়ার জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টার কারণেও কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
তবে কর হিসাবরক্ষক এবং তালিকাভুক্ত এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে কর দাখিলের কাজটি এখনো পর্যন্ত ভালোভাবে চলছে।
কর পেশাদাররা জানিয়েছেন, তাঁরা প্রশ্ন করার জন্য আইআরএস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন, ইলেকট্রনিকভাবে ক্লায়েন্টদের রিটার্ন জমা দিতে পারছেন এবং সময়মতো রিফান্ডও পাচ্ছেন।
এখনও পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক বলেই মনে হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ সার্টিফাইড পাবলিক অ্যাকাউন্ট্যান্টস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক কোজিয়েল বলেছেন।
ইলিনয়-এর সিপিএ মার্ক গ্যালেগোসও একই কথা বলেছেন যে, কর দাখিলের প্রক্রিয়াটি “এখনও পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে মসৃণভাবে চলছে।
এইচএন্ডআর ব্লক নামক একটি কর প্রস্তুতকারক সংস্থা জানিয়েছে, “আমরা দেখছি আইআরএস নিয়মিতভাবে রিটার্ন প্রক্রিয়া করছে এবং রিফান্ড ইস্যু করছে এবং আমরা আশা করি এটি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
তবে, কর পেশাদাররা তাঁদের ক্লায়েন্টদের অভিযোগ এবং নিরীক্ষার (অডিট) সমাধানে বিলম্বের সম্মুখীন হচ্ছেন।
ক্যালিফোর্নিয়া সোসাইটি অফ সিপিএ-এর সচিব এবং সিপিএ মিকলস রিংবাউয়ার জানিয়েছেন, ক্লায়েন্টদের জন্য কিস্তিতে কর পরিশোধের ব্যবস্থা করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
উইসকনসিনের তালিকাভুক্ত এজেন্ট ডেভিড মেলেম জানিয়েছেন, তাঁর একজন ক্লায়েন্ট ২০১৯ সালের একটি সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করেছেন এবং বকেয়া কর পরিশোধ করেছেন।
কিন্তু আইআরএস-এর রেকর্ডে এখনো পর্যন্ত পেমেন্টটি প্রতিফলিত না হওয়ায় তাঁর ২০২৪ সালের রিফান্ড আটকে আছে।
অন্যদিকে, নর্থ ক্যারোলিনার সিপিএ জিম বাটনো এবং টেক্সাসের তালিকাভুক্ত এজেন্ট জোশুয়া ইয়ংব্লাড জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের ক্লায়েন্টদের পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি ফর্ম অনুমোদনে বিলম্বের শিকার হচ্ছেন।
আগে এই অনুমোদন পেতে পাঁচ দিনের কম সময় লাগতো, এখন ৩০ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে।
এই ধরনের বিলম্ব ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে মনে করেন মেলেম।
আইআরএস-এর প্রাক্তন কমিশনার চার্লস রেটিগ একটি টাউন হলে এআইসিপিএ-এর সদস্যদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, ক্লায়েন্টদের নিরীক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত আইআরএস-কে পাঠানো সমস্ত কিছুর অনুলিপি রাখতে হবে।
কারণ কর্মীদের এই পরিবর্তনের ফলে নিরীক্ষা বিভাগের কর্মীরা হয়তো তাদের কাজ সঠিকভাবে করতে পারছেন না।
যদি কর্মীদের আরও ছাঁটাই করা হয়, তবে এটি করদাতাদের পরিষেবাতেও প্রভাব ফেলতে শুরু করবে।
আইআরএস-এর প্রাক্তন কমিশনার জন কোসকিনেন বলেছেন, “যদি আপনি ঘাটতি মোকাবেলা করার চেষ্টা করেন, তবে আপনি আইআরএস-এর সঙ্গে কোনো ঝামেলা করতে চাইবেন না।
কারণ এটি সরকারের রাজস্ব উত্পাদনের মূল কেন্দ্র।
কর মৌসুমের সময় আইআরএস কর্তৃক সংগৃহীত অর্থ ফেডারেল সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়ারফেল বলেছেন, গত বছরের একই সময়ের তুলনায়, “আমরা রাজস্ব কম আসার প্রাথমিক লক্ষণ দেখছি।
আমার আশঙ্কা, এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত এই প্রবণতা আরও খারাপ হতে পারে।
এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর দাখিলের সময়সীমা।
৭ই মার্চ পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, এই কর মৌসুমে গত বছরের তুলনায় প্রায় ২% কম রিটার্ন জমা পড়েছে।
তবে আইআরএস জানিয়েছে, তারা ৪ কোটি ৩৬ লক্ষের বেশি রিফান্ড ইস্যু করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১.৫% বেশি।
পরিশোধিত গড় পরিমাণ ছিল ৩,৩২৪ মার্কিন ডলার (প্রায় ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা), যা ২০২৪ সালের তুলনায় প্রায় ৬% বেশি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন