যুক্তরাষ্ট্রের দুই রাজ্যে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানদের জনসভা: বিতর্কের ঝড়, উদ্বেগের ছাপ।
যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি ভিন্ন রাজ্যে রিপাবলিকান জনপ্রতিনিধিদের জনসভাগুলোতে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। একদিকে, নর্থ ক্যারোলাইনার অ্যাশভিলে এক কংগ্রেসম্যানের (Congressman) সভায় বিরোধীদের বিক্ষোভ, শ্লোগান আর তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।
অন্যদিকে, ওয়াইমিংয়ের ইভান্সটনে অনুষ্ঠিত সভায় কিছুটা শান্ত পরিবেশে আলোচনা হয়, যেখানে স্থানীয় ভোটাররা সরকারের নীতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই দুটি ঘটনাই বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগণের মধ্যে বিদ্যমান উদ্বেগ ও বিতর্কের প্রতিফলন।
অ্যাশভিলের ঘটনা:
নর্থ ক্যারোলাইনার অ্যাশভিলে কংগ্রেসম্যান চাক এডওয়ার্ডসের (Chuck Edwards) জনসভায় হট্টগোল হয়। সেখানে আসা লোকজন এডওয়ার্ডসের প্রতিটি কথার বিরোধিতা করে শ্লোগান দিতে শুরু করেন।
এমনকি, এক ব্যক্তি এডওয়ার্ডসের উপর মিথ্যা বলার অভিযোগ আনেন এবং তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। পরে পুলিশ তাকে সভাস্থল থেকে বের করে দেয়।
এডওয়ার্ডসের এলাকার অনেক মানুষ সম্প্রতি হারিকেন হেলেনের (Hurricane Helene) কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এখনো চলছে, এমন পরিস্থিতিতে ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (FEMA)-কে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ছিল।
সভায় আসা এক ডেমোক্রেট সমর্থক, ৫৪ বছর বয়সী জয় কেরি (Jay Carey) জানান, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল এডওয়ার্ডসকে তার কাজের জবাবদিহি করতে বাধ্য করা।
হারিকেনে তার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরিবারকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হয়। সভা শেষে এডওয়ার্ডস সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ভিন্নমত এবং ভিন্ন চিন্তাগুলোর বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি, এজন্য কৃতজ্ঞ।”
ইভান্সটনের চিত্র:
অন্যদিকে, ওয়াইমিংয়ের ইভান্সটনে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান হ্যারিয়েট হেজম্যানের (Harriet Hageman) জনসভা তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিল। এখানে আসা ভোটাররা মূলত সরকারের নীতি এবং কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রশ্ন করেন।
বিশেষ করে, প্রযুক্তি বিলিয়নেয়ার এলন মাস্কের (Elon Musk) নির্বাহী বিভাগের ভূমিকা নিয়ে অনেকে জানতে চান। উল্লেখ্য, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) মাস্ককে সরকারের ব্যয় এবং আকার কমানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন।
হেজম্যান মাস্ককে “বিশেষ সরকারি কর্মচারী” হিসেবে বর্ণনা করেন, যিনি “অতি গোপন নিরাপত্তা ছাড়পত্র” পেয়েছেন। তিনি বৈদেশিক সাহায্য বিষয়ক চুক্তিতে মাস্কের কাজের প্রশংসা করেন এবং ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টকে (USAID) “অর্থের অপচয়কারী” হিসেবে উল্লেখ করেন।
সভায় উপস্থিত ৬০ বছর বয়সী কার্ল অলরেড (Karl Allred) ট্রাম্পের “অপচয় হ্রাস”-এর পদক্ষেপকে স্বাগত জানান, তবে প্রতিরক্ষা বাজেট কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, সামরিক খাতে প্রচুর অর্থ অপচয় হয়। হেজম্যান নিজেও ইউএস পোস্টাল সার্ভিসকে (US Postal Service) লক্ষ্য করে মাস্কের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের সমালোচনা করেন।
মাস্কের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী এক মাসের মধ্যে পোস্ট অফিসের প্রায় ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করার কথা রয়েছে। হেজম্যান জানান, ওয়াইমিংয়ের মতো কম জনসংখ্যার রাজ্যগুলোতে এই সিদ্ধান্তের গুরুতর প্রভাব পড়বে।
উভয় জনসভার অভিজ্ঞতা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিদ্যমান বিভেদ ও উদ্বেগের চিত্র তুলে ধরে। একদিকে যেমন সরকারের কিছু নীতির বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে, তেমনি সরকারি কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস