মহাকাশ বিজ্ঞানীদের এক নতুন আবিষ্কারে জানা গেছে, আমাদের সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র বার্নার্ডের তারাটিকে কেন্দ্র করে ঘুরছে চারটি নতুন গ্রহ। এই গ্রহগুলো আকারে পৃথিবীর চেয়ে ছোট, তাই এদের উপ-পৃথিবী (sub-Earth) হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।
এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা আমাদের সৌরজগতের বাইরে গ্রহ এবং জীবন অনুসন্ধানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
বার্নার্ডের তারা, যা আমাদের থেকে প্রায় ৬ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত, একটি লাল বামন নক্ষত্র। এটি আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে কাছের একক নক্ষত্র ব্যবস্থা, যা এটিকে গ্রহ অনুসন্ধানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যার গবেষক এবং এই গবেষণার প্রধান লেখক রিতভিক বসন্ত বলেন, “বার্নার্ডের তারা আমাদের মহাজাগতিক প্রতিবেশী, অথচ আমরা এটির সম্পর্কে খুব কম জানি। এই আবিষ্কার সেই জ্ঞানের অভাব পূরণ করতে সহায়ক হবে।”
এই গ্রহগুলো আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানীরা ‘MAROON-X’ নামক একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেছেন, যা হাওয়াইয়ের জেমিনি নর্থ টেলিস্কোপে স্থাপন করা হয়েছে। এই যন্ত্র নক্ষত্রের সামান্য “দোল” (wobble) পর্যবেক্ষণ করে গ্রহ খুঁজে বের করে।
যখন কোনো গ্রহ তার নক্ষত্রের চারপাশে ঘোরে, তখন তার মহাকর্ষীয় টানের কারণে নক্ষত্রের অবস্থানের সামান্য পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে গ্রহের উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
গবেষকরা চিলির ‘ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ’-এর ‘ESPRESSO’ নামক যন্ত্রের সাহায্যও নিয়েছেন। এই দুটি যন্ত্রের ডেটা একত্রিত করে বিজ্ঞানীরা চারটি গ্রহের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছেন।
আবিষ্কৃত গ্রহগুলো বার্নার্ডের তারার খুব কাছে অবস্থান করছে। এদের কক্ষপথ এতটাই ছোট যে একটি গ্রহ তার নক্ষত্রকে কয়েক দিনের মধ্যেই প্রদক্ষিণ করে ফেলে।
উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবীর সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরতে ৩৬৫ দিন লাগে, যেখানে এই গ্রহগুলোর কিছু তিন দিনের কম সময়ে নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই গ্রহগুলোর পৃষ্ঠ এতটাই উত্তপ্ত যে সেখানে প্রাণের (জীবন) সম্ভাবনা নেই। এমনকি, এগুলো তারার বাসযোগ্য অঞ্চলের (habitable zone) বাইরে অবস্থিত।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই আবিষ্কার ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষুদ্র আকারের গ্রহগুলো কীভাবে গঠিত হয়, সে সম্পর্কে নতুন তথ্য জানতে সাহায্য করবে এটি।
এই ধরনের আবিষ্কারগুলি আমাদের সৌরজগতের বাইরে বসবাসযোগ্য গ্রহ খুঁজে বের করার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
এই গবেষণার ফলাফল ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন