ইউরোপে মার্কিন পণ্য বর্জনের হিড়িক, ডেনমার্কের নাগরিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সম্প্রতি, ডেনমার্কসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে দেশটির পণ্য বর্জনের প্রবণতা বাড়ছে।
এই বর্জন আন্দোলনের মূল কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু সিদ্ধান্ত, যা অনেকের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। খবর অনুযায়ী, এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীও শামিল হয়েছেন।
ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন থেকে আসা খবর অনুযায়ী, দেশটির নাগরিক ইভান হ্যানসেন নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা দোকানে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি কোনো পণ্য কিনছেন না। তিনি জানান, ট্রাম্পের নীতিগুলোর প্রতিবাদ জানানোর এটাই তার কাছে একমাত্র উপায়।
গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকির পাশাপাশি পানামা খাল ও গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং এলন মাস্কের বিতর্কিত কিছু মন্তব্যের কারণে তিনি ক্ষুব্ধ।
ডেনমার্কের বিলকা সুপারমার্কেটের কর্মীরাও ক্রেতাদের সুবিধার্থে ইউরোপীয় পণ্য চিহ্নিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন। সেখানে ‘ইউরোপীয় পণ্য কিনুন’ এমন বার্তা দিয়ে একটি তারকা চিহ্ন ব্যবহার করা হচ্ছে, যা গ্রাহকদের ইউরোপে উৎপাদিত পণ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে।
শুধু ডেনমার্ক নয়, ফ্রান্স এবং কানাডাতেও এই বর্জন আন্দোলনের ঢেউ লেগেছে। ফ্রান্সে “বয়কট ইউএসএ, বাই ফ্রেঞ্চ অ্যান্ড ইউরোপিয়ান!” (Boycott USA, Buy French and European!) নামে একটি অনলাইন গ্রুপ তৈরি হয়েছে, যেখানে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ২০ হাজারের বেশি সদস্য যুক্ত হয়েছেন।
এই গ্রুপের সদস্যরা মনে করেন, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এবং ইউরোপের বিরুদ্ধে তার নেওয়া কিছু পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানানোর এটি একটি ভালো উপায়।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা এখন কোকা-কোলা, ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়াইন, বাদামের মতো পণ্যগুলো বর্জন করছেন এবং এর বদলে ইউরোপে তৈরি হওয়া বিকল্প পণ্য ব্যবহার করছেন। কেউ কেউ আবার তাদের পুরনো মার্কিন যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে ইউরোপীয় পণ্য ব্যবহার করতে শুরু করেছেন।
তবে, বর্জন আন্দোলনের অর্থনৈতিক প্রভাব কতটা হবে, সে বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। গথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ওলফ জোহানসন স্টেনম্যানের মতে, এর সরাসরি অর্থনৈতিক প্রভাব হয়তো সীমিত, তবে এটি আমেরিকানদের মানসিক শান্তির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে, এই বর্জন আন্দোলনের ফলে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যাও সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন, যারা নেটফ্লিক্সের মতো বিনোদন পরিষেবা নিয়মিত ব্যবহার করেন, তাদের পক্ষে হয়তো এটি বর্জন করা কঠিন। আবার, কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় বিকল্প খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এই অসন্তোষ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন কিছু প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। বর্জনকারীরা মনে করেন, ক্রেতাদের এই ধরনের পদক্ষেপ কোম্পানিগুলোকে তাদের নীতি পরিবর্তনে প্রভাবিত করতে পারে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।