ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা এখনো পর্যন্ত অনিশ্চিত। উভয় দেশের মধ্যে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চললেও, এর শর্তাবলী এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
উভয় পক্ষই তাদের কিছু মৌলিক দাবি এবং শর্তের ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছে, যা শান্তি আলোচনাকে কঠিন করে তুলছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারে, এমনটা মনে করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি পরিকল্পনা তৈরির চেষ্টা করা যেতে পারে।
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আশঙ্কা করছেন যে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত এই যুদ্ধবিরতিকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করবেন। শান্তি প্রক্রিয়াকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং যুদ্ধের সময়সীমা বাড়াতে তিনি বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিতে পারেন।
এই পরিস্থিতিতে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও আলোচনায় যুক্ত হয়েছেন। তিনি মঙ্গলবার পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন এবং আলোচনার একটি অংশ হিসেবে ভূমি ও পাওয়ার প্ল্যান্টের মতো বিষয়গুলোর সমাধানের কথা বলেছেন।
ট্রাম্প এই প্রক্রিয়াকে “কিছু সম্পদ ভাগাভাগি” করার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
তবে, স্বল্পমেয়াদী যুদ্ধবিরতির বাইরে উভয় পক্ষই একে অপরের কাছে বড় ধরনের ছাড় দিতে নারাজ। তাদের কিছু ‘রেড লাইন’ বা চূড়ান্ত শর্ত রয়েছে, যা তারা কোনো অবস্থাতেই লঙ্ঘন করতে রাজি নয়।
রাশিয়ার প্রধান দাবিগুলো হলো: ইউক্রেন যেন ন্যাটোতে যোগদানের চিন্তা ত্যাগ করে, নিজেদের সামরিক শক্তি কমিয়ে আনে এবং রুশ ভাষা ও সংস্কৃতির সুরক্ষার ব্যবস্থা করে।
এছাড়া, রাশিয়া কিয়েভকে ২০১৪ সালে অবৈধভাবে দখল করা চারটি অঞ্চল – দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসন থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছে।
অন্যদিকে, রাশিয়া চাইছে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের জব্দ করা সম্পদ ফেরত দিক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়া হোক।
ট্রাম্প প্রশাসনও সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার শিথিলতার ইঙ্গিত দিয়েছে।
পুতিন বারবার “সংকটের মূল কারণ” দূর করার ওপর জোর দিয়েছেন।
তার মতে, রাশিয়ার সীমান্তের কাছে ন্যাটো সামরিক জোটের বিস্তার তাদের নিরাপত্তা জন্য হুমকি স্বরূপ।
এছাড়াও, পুতিন মনে করেন, জেলেনস্কির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের বৈধতা নেই।
যদিও ইউক্রেন বলছে, যুদ্ধের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
ট্রাম্পও পুতিনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইউক্রেনে নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
রাশিয়া কোনো ন্যাটো সদস্যের সৈন্যকে শান্তিরক্ষী হিসেবে তাদের অঞ্চলে দেখতে রাজি নয়।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রধান দাবি হলো: আন্তর্জাতিক মিত্রদের কাছ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি, যা ভবিষ্যতে রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করতে পারবে।
ন্যাটো সদস্যপদ লাভের সম্ভাবনা ক্ষীণ হওয়ায়, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের নেতৃত্বে একটি “ইচ্ছুক জোট” এই গ্যারান্টি নিয়ে কাজ করছে।
এই জোটে ইউরোপীয় সৈন্যদের উপস্থিতি এবং রাশিয়ার নতুন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর সামরিক পদক্ষেপের পরিকল্পনা রয়েছে।
জেলেনস্কি ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছেন, যার জন্য আন্তর্জাতিক মিত্রদের দ্রুত এবং ধারাবাহিক সমর্থন প্রয়োজন।
রাশিয়ার সামরিক শক্তির ক্ষতি করতে সক্ষম এমন অস্ত্রের মজুদ তৈরি করাও তাদের অন্যতম প্রধান দাবি।
কিয়েভ মিত্রদের ওপর নির্ভরতা কমাতে নিজস্ব অস্ত্র শিল্প গড়ে তুলতে চাইছে।
ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে তাদের শিশুদের ফেরত এবং রাশিয়ার কারাগারে আটক হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।
উভয় পক্ষের এই বিপরীতমুখী অবস্থানে সমঝোতা কঠিন হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উভয় পক্ষকে ছাড় দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইউক্রেনের এক পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
আলোচনায় ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
রাশিয়ার জন্য, হয় শান্তিরক্ষী হিসেবে, অথবা জোটের বাইরের কোনো নিশ্চয়তা প্রদানকারী শক্তি হিসেবে ন্যাটোর উপস্থিতি ‘রেড লাইন’।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের জন্য, রাশিয়ার দখলে থাকা ভূখণ্ডের ভাগ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা তাদের সামরিক সক্ষমতার অভাবে পুনরুদ্ধার করা কঠিন।
জেলেনস্কি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তার দেশ কখনোই এই অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়…