গরু ঘাস খেয়ে বড় হলে পরিবেশের কি উপকার হয়? নতুন গবেষণায় মিলছে ভিন্ন তথ্য
বিশ্বজুড়ে গরুর মাংস খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে, কিন্তু পরিবেশের উপর এর প্রভাব নিয়ে নতুন গবেষণা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। “ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস”-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘাস খেয়ে বড় হওয়া গরুর মাংসও কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে সাধারণ গরুর মাংসের মতোই ক্ষতিকর।
সাধারণ ধারণায় ঘাস-খাওয়া গরুর মাংসকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে দেখা হয়, কারণ এতে কার্বন নিঃসরণ কম হয় বলে মনে করা হয়। কিন্তু নতুন এই গবেষণা সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঘাস-খাওয়া গরুগুলো ধীরে ধীরে বাড়ে, ফলে একই পরিমাণ মাংস উৎপাদনে বেশি সংখ্যক গরুর প্রয়োজন হয়। এতে কার্বন নিঃসরণও বেশি হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
গবেষকরা গরুর মাংস উৎপাদন প্রক্রিয়ার কার্বন নিঃসরণ মডেল তৈরি করে ঘাস-খাওয়া ও সাধারণ গরুর মধ্যে তুলনা করেছেন। তারা দেখেছেন, ঘাস-খাওয়া গরুর ক্ষেত্রে খাদ্য গ্রহণ, মিথেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ এবং মাংস উৎপাদনের পরিমাণে ভিন্নতা রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, শুষ্ক অঞ্চলের গরুর তুলনায় সবুজ-শ্যামল এলাকার গরুর উৎপাদন ক্ষমতা বেশি। এই হিসাবের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ঘাস-খাওয়া গরুর মাংস পরিবেশের জন্য কতটা ভালো, তা জানতে চেয়েছেন।
গবেষণার প্রধান গবেষক, বার্ড কলেজের পরিবেশ পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক গিডন এসেল বলেন, “অনেকেই চান তাদের খাদ্য নির্বাচনের মাধ্যমে যেন পরিবেশের প্রতি তাদের ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটে। কিন্তু ভুল তথ্যের কারণে তারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।”
তবে, ঘাস-খাওয়া গরুর মাংসের কিছু ভালো দিকও রয়েছে। পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘাস-খাওয়া গরু পালন করলে প্রাণীর ভালো থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় এবং স্থানীয় পরিবেশের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব কম হয়।
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানে কার্বন নিঃসরণ কমানো সবচেয়ে জরুরি।
ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন-ম্যাডিসনের ঘাসভূমি বাস্তুবিদ্যার অধ্যাপক র্যান্ডি জ্যাকসন এই গবেষণার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, একই পরিমাণ মাংস উৎপাদনের ক্ষেত্রে ঘাস-খাওয়া গরুর কারণে কার্বন নিঃসরণ বেশি হয়।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, পরিবেশ সচেতন হতে চাইলে গরুর মাংস কম খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। কারণ, গরুর মাংস উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণে জমি ও সম্পদের প্রয়োজন হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত গবেষণা