সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে সম্প্রতি সরকার বিরোধী এক বিক্ষোভে বিতর্কিত শব্দ তরঙ্গ বিষয়ক অস্ত্রের ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, নিরাপত্তা বাহিনী শান্তিপূর্ণ সমাবেশে এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা মানুষের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
যদিও দেশটির সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং একে মিথ্যা বলে আখ্যা দিয়েছে।
গত শনিবারের ওই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের অভিযোগ, নিরাপত্তা বাহিনী শব্দ তরঙ্গ নির্গত করতে সক্ষম এমন একটি যন্ত্র ব্যবহার করেছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে মানুষকে কাবু করতে পারে।
যদিও সার্বিয়ায় এই ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ। বিক্ষোভকারীরা এই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচ এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি একে ‘মিথ্যাচার’ হিসেবে উল্লেখ করে এর মাধ্যমে ‘সার্বিয়াকে ধ্বংসের চক্রান্ত’ করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন।
ভুচিচ জানিয়েছেন, তিনি খুব শীঘ্রই এই ঘটনার তদন্তের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এবং রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসকে (এফএসবি) আমন্ত্রণ জানাবেন।
তাঁর ভাষ্যমতে, যারা এই ধরনের অভিযোগ তুলছেন, তাদের মিথ্যাচার উন্মোচন করা জরুরি।
সরকার যদিও সরাসরি স্বীকার করেনি, তবে তারা জানিয়েছে, প্রায় দুই বছর আগে তারা এই ধরনের শব্দ-নিয়ন্ত্রণ অস্ত্র তাদের বহরে যুক্ত করেছে।
তবে তাদের দাবি, শনিবারের বিক্ষোভে এই অস্ত্রের ব্যবহার হয়নি।
এদিকে, দেশটির বিরোধী দল ‘মুভ-চেঞ্জ’ আন্দোলনের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, যাতে তারা ইউরোপীয় কাউন্সিল এবং ইউরোপে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বিষয়ক সংস্থার (ওএসসিই) মাধ্যমে এই ঘটনার একটি স্বাধীন তদন্তের ব্যবস্থা করে।
এরই মধ্যে অনলাইনে এই দাবিতে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ স্বাক্ষর করেছেন।
বিক্ষোভকারীরা তাঁদের আবেদনে বলেছেন, তদন্তে শব্দ অস্ত্রের ব্যবহার, এর স্বাস্থ্যগত ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রভাবগুলোর চিকিৎসা, আইন ও প্রযুক্তিগত দিকগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বরিস তাদিচও এই ঘটনার সত্যতা উদঘাটনের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছেন।
তিনি মনে করেন, এই ঘটনার কারণে জনগণের নিরাপত্তা গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে এবং নাগরিকদের জীবন ও স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
গত ১লা নভেম্বর একটি রেল স্টেশনের ছাউনি ধসে ১৫ জন নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়।
এই ঘটনার জন্য অনেকে সরকারের দুর্নীতিকে দায়ী করছেন।
সেই ঘটনার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ চলছে, যা প্রেসিডেন্ট ভুচিচের ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
বিক্ষোভের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, নিহতদের স্মরণে ১৫ মিনিটের নীরবতা পালনের সময় হঠাৎ একটি তীব্র শব্দ শোনা যায়, যা মুহূর্তেই আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং সেখানে থাকা মানুষজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে শুরু করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শব্দ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষজন আত্মরক্ষার্থে ছুটতে শুরু করে, ফলে রাস্তার মাঝখানে দ্রুত জনশূন্য হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দ অস্ত্রের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা তীব্র কানের ব্যথায় আক্রান্ত হন, তাঁদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা এবং আতঙ্ক দেখা যায়।
দীর্ঘ সময় ধরে এর সংস্পর্শে থাকলে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে এবং শ্রবণশক্তি হারানোরও সম্ভবনা থাকে।
অভিযোগ উঠেছে, বিক্ষোভকারীদের দমনে সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি ‘লং রেঞ্জ অ্যাকোস্টিক ডিভাইস’ (এলআরএডি) ব্যবহার করা হয়েছে।
এই যন্ত্রটি উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ তরঙ্গ তৈরি করতে পারে, যা অনেক দূর পর্যন্ত শোনা যায়।
প্রেসিডেন্ট ভুচিচ এই বিক্ষোভকে তাঁর ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের একটি চক্রান্ত হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং যারা মিথ্যা খবর ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন