যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা: উদ্বেগে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা?
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন আবারও বিদেশি নাগরিকদের ওপর কঠোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, এমন আশঙ্কার মধ্যে দেশটির ইয়েল ল’ স্কুলের অধ্যাপকগণ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছেন। রবিবার রাতে পাঠানো এক ইমেইলে অধ্যাপক মুনীর আহমদ এবং মাইকেল উইশনি সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার শিকার হতে পারে এমন দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের হয় যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত ফিরে আসার কথা বলেছেন, নয়তো যারা এখন দেশের বাইরে আছেন তাদের যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
অধ্যাপকগণ তাদের ইমেইলে উল্লেখ করেছেন, যদিও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেনি, তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের মতো এবারও তারা কিছু দেশের নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। এই সতর্কবার্তার পরেই ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকেও একই ধরনের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। রয়টার্স এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বিবেচনা করছে, যা ৪৩টি দেশের নাগরিকদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এর মধ্যে ১১টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।
সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ১১টি দেশের নাগরিকদের জন্য সবচেয়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে। দেশগুলো হলো: আফগানিস্তান, ভুটান, কিউবা, ইরান, লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং ইয়েমেন। এছাড়া, দ্বিতীয় স্তরে ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসতে পারে বেলারুশ, পাকিস্তান, রাশিয়া ও হাইতি। তৃতীয় স্তরে থাকা ২১টি দেশের মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকার, এবং তাদের নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগের কারণ দর্শানোর জন্য ৬০ দিন সময় দেওয়া হবে।
ইয়েলের সতর্কবার্তায় বিশেষভাবে বলা হয়েছে, শুধু নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা দেশগুলোই নয়, বরং সকল বিদেশি শিক্ষার্থী এবং স্কলারদের ওপরও কড়া নজরদারি করা হতে পারে। সীমান্ত কর্মকর্তারা ফিলিস্তিন ইস্যু সমর্থন করেন কিনা, এমন প্রশ্ন করতে পারেন এবং এর ভিত্তিতে ভিসা বাতিলও করা হতে পারে। অধ্যাপকগণ শিক্ষার্থীদের এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক মাস আগে থেকেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সতর্ক করা হচ্ছে। ট্রাম্পের আগের মেয়াদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পুনরাবৃত্তি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় অনেক শিক্ষার্থীকে দ্রুত দেশে ফিরতে বলা হয়েছিল।
২০শে জানুয়ারির নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এমন দেশগুলো চিহ্নিত করতে বলেছে, যেখানকার নাগরিকদের ভিসা যাচাই এবং নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্য পর্যাপ্ত নয়। আগামী ২১শে মার্চের মধ্যে এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, খুব শীঘ্রই নতুন বিধিনিষেধ আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে, এই সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর ঘটনার পরে এই উদ্বেগ আরও বেড়েছে। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক ড. রাশা আলাউয়েহকে গত সপ্তাহে বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও লেবাননে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা মাহমুদ খলিলের সঙ্গে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আটক করে অভিবাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে লুইজিয়ানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে, আমেরিকান-ইসলামিক সম্পর্ক কাউন্সিল (Council on American-Islamic Relations) তাদের ওয়েবসাইটে ভ্রমণ বিষয়ক একটি পরামর্শ জারি করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসকারী, সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার শিকার হতে পারে এমন দেশগুলোর নাগরিকদেরকে আগামী ৩০ দিনের জন্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান