অস্ট্রেলিয়ার একটি সমুদ্র সৈকতে রহস্যজনক ফেনা দেখা দেওয়ায় একশোর বেশি সার্ফার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এই ঘটনায় সামুদ্রিক জীবনেরও ক্ষতি হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সি-ড্রাগন, মাছ এবং অক্টোপাস।
জানা গেছে, অ্যাডিলেইড থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওয়েটপিংগা এবং পার্সনস বিচ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত গরম, শান্ত জল এবং সমুদ্রের তাপপ্রবাহের কারণে মাইক্রোঅ্যালগাল ব্লুম (Microalgal bloom) বা শৈবালের বিস্তার এই অবস্থার কারণ হতে পারে।
স্থানীয় সার্ফাররা জানিয়েছেন, তাদের ঝাপসা দেখা, চোখ জ্বালা করা, কাশি এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয় সার্ফার অ্যান্থনি রোলান্ড বলেন, “পুরো সৈকতে ঘন, হলুদ ফেনা জমে রয়েছে, সঙ্গে রয়েছে সবুজ ও পিচ্ছিল কাদা।”
তিনি আরও জানান, সৈকতে মরে যাওয়া সি-ড্রাগনসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর ছবি তিনি তুলেছেন, যা পানির মধ্যে “অস্বাভাবিক কিছু” থাকার প্রমাণ দেয়।
রোলান্ডের পোস্টের পর অনেকেই তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত একশোর বেশি মানুষ এই ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি উদ্বিগ্ন যে ফেনার বিস্তার ফ্লুরিউ উপদ্বীপের অন্যান্য সৈকতেও ছড়াতে পারে।
ভিক্টর হারবার, মিডলটন এবং এনকাউন্টার বে-এর সৈকতে এরই মধ্যে মৃত মাছ পাওয়া গেছে এবং মিডলটনে মৃত অক্টোপাসও দেখা গেছে।
রাজ্য পরিবেশ বিভাগের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে” সৈকতগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ ঘটনার তদন্ত করছে। পরিবেশ সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ (ইপিএ) জানিয়েছে, তারা ওয়েটপিংগা এবং পার্সনস বিচে মৃত মাছ এবং সার্ফারদের স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে অবগত।
তারা আরও জানিয়েছে, সৈকতে লালচে দাগ এবং ফেনা দেখা গেছে। ইপিএ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে মিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে পানির নমুনা সংগ্রহ করছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রা, শান্ত জল এবং সমুদ্রের তাপপ্রবাহের কারণে সৃষ্ট মাইক্রোঅ্যালগাল ব্লুমের (Microalgal bloom) ফলেই এমনটা হয়েছে। বর্তমানে সমুদ্রের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি রয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল এবং নদ-নদীতে শৈবালের বিস্তার এবং পরিবেশ দূষণের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং দূষণের ফলে আমাদের দেশের জলজ পরিবেশেও এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সুন্দরবনসহ দেশের উপকূলীয় এলাকার জীববৈচিত্র্যও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান