মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির হাল নিয়ে চলছে জোর বিতর্ক। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপর দুর্বল অর্থনীতির দায় চাপাচ্ছেন। ট্রাম্পের দাবি, বাইডেন এমন একটি ‘বিপর্যয়কর’ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তার হাতে তুলে গিয়েছেন।
কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মতে, অনেক সূচকেই দেখা যাচ্ছে বাইডেন একটি শক্তিশালী অর্থনীতি ট্রাম্পের হাতে তুলেছিলেন।
মার্কিন অর্থনীতি বর্তমানে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। শেয়ার বাজারে অস্থিরতা, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে “চরম ভীতি” এবং ভোক্তাদের আস্থা কমে যাওয়া এর মধ্যে অন্যতম। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এই অস্থিরতার মূল কারণ হল ট্রাম্পের নীতি, বিশেষ করে বাণিজ্য শুল্ক (ট্যারিফ) আরোপের সিদ্ধান্ত।
ট্রাম্প যদিও বাইডেন প্রশাসনের উপর দায় চাপিয়ে বলছেন, তিনি “ভয়ংকর”, “ক্ষতিগ্রস্ত” একটি অর্থনীতি পেয়েছেন। কিন্তু অর্থনীতিবিদ এবং পরিসংখ্যানবিদদের মতে, বাইডেন যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করেন, তখন অর্থনীতির অবস্থা বেশ ভালো ছিল।
এমনকি অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ২০২৫ সালের শুরুতে ট্রাম্পের সময়ে অর্থনীতির আরও উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
অর্থনীতিবিদ ও ক্যাটো ইনস্টিটিউটের গবেষণা ফেলো জাই কেডিয়া সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বাইডেনের সময়ে অর্থনীতির অবস্থা খারাপ ছিল, যা গত বছরের জনমত জরিপেও প্রতিফলিত হয়েছিল। তবে মুদ্রাস্ফীতি এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সূচকগুলো ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার সময় স্থিতিশীল ছিল।”
কেডিয়ার মতে, এখন যা হচ্ছে, তা রাজনীতির চিরাচরিত ‘দোষারোপের খেলা’। তিনি মনে করেন, রাজনীতিবিদদের অর্থনীতি থেকে দূরে থাকা উচিত।
কেডিয়া বলেন, বাইডেন প্রশাসন ব্যাপক ব্যয়ের বিল এনেছিল, যা কিছুটা হলেও মূল্যবৃদ্ধির কারণ হয়েছে। বর্তমানেও শুল্কের কারণে একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
“আগের প্রশাসনের উপর দোষ চাপানো কঠিন। ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর শেয়ার বাজার বেড়েছিল। কিন্তু তাঁর প্রশাসনের কিছু বিপজ্জনক অর্থনৈতিক ধারণার কারণে গত এক মাসে অর্থনীতির অবনতি হতে শুরু করেছে।”
তবে, অর্থনৈতিক তথ্য সবসময় চূড়ান্ত নাও হতে পারে। এক মাসের হিসাব প্রবণতা নির্দেশ করে না। বিস্তারিত তথ্য এলে পরিসংখ্যানের পরিবর্তন হতে পারে।
এছাড়াও, আবহাওয়ার মতো কিছু ঘটনার কারণেও অর্থনৈতিক সূচক প্রভাবিত হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, বাইডেন তাঁর সময়ে প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টির কৃতিত্ব দাবি করেন। অন্যদিকে, ট্রাম্প ফেব্রুয়ারীর কর্মসংস্থান বিষয়ক একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন, যেখানে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ১ লক্ষ কর্মসংস্থান বাড়ার কথা বলা হয়েছে।
ট্রাম্প এই সাফল্যের জন্য তাঁর বাণিজ্য নীতির কথা উল্লেখ করেছেন। কেডিয়ার মতে, “শুল্কের প্রভাব ম্যানুফ্যাকচারিং এবং অর্থনীতির ওপর কেমন হবে, তা বোঝা এখনো অনেক কঠিন। বাজারের আচরণই এক্ষেত্রে অনেক কথা বলছে।”
বর্তমানে অর্থনৈতিক এই অনিশ্চয়তাগুলো সম্ভাব্য মন্দার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। আরএসএম ইউএস-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ জো ব্রুসুয়েলাস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিকে মন্দা বলা না গেলেও, এর কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে।”
তাঁর প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি মন্দা আসার সম্ভাবনা ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছে। ব্রুসুয়েলাস আরও বলেন, বাণিজ্যনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসলে তাঁরা এই পূর্বাভাস পুনর্বিবেচনা করবেন।
“যদি কোনো নির্দিষ্ট বাণিজ্য নীতির কারণে এই ধাক্কা লাগে, তাহলে মন্দার জন্য এর দায় ট্রাম্প প্রশাসনের উপরই বর্তাবে।”
তবে লয়োলা মেরিমন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং এসএস ইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ সাং ওন সন মনে করেন, আস্থা জরিপগুলো সব সময় অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কর্মক্ষমতার নির্ভরযোগ্য সূচক নয়।
তাঁর মতে, বর্তমানে “অভূতপূর্ব অনিশ্চয়তা” রয়েছে। “কুয়াশা কাটলে আস্থা বাড়বে। তাই ব্যবসার আস্থা বা ভোক্তার আস্থাকে অর্থনীতির ভালো-মন্দ বিচারের সূচক হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন