কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence বা AI) এখন সংঘবদ্ধ অপরাধের জগৎকে নতুন রূপে শক্তিশালী করে তুলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) পুলিশ সংস্থা, ইউরোপোল (Europol)-এর এক সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধীরা সমাজের ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র-পরিচালিত অস্থিতিশীলতা তৈরির মিশনেও সহায়তা করছে।
ইউরোপোলের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদক পাচার থেকে শুরু করে মানব পাচার, অর্থ পাচার, সাইবার হামলা এবং অনলাইন প্রতারণার মতো অপরাধগুলো সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে এবং আইনের শাসনকে দুর্বল করে দেয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অপরাধীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সুসংগঠিত এবং ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।
সাইবার অপরাধ এখন একটি ডিজিটাল অস্ত্র প্রতিযোগিতায় রূপ নিয়েছে, যা সরকার, ব্যবসা এবং সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, অনলাইনে শিশু যৌন নির্যাতনের উপাদান তৈরিতে AI এর ব্যবহার বেড়েছে, যা ছবি বিশ্লেষণ এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করা কঠিন করে তুলছে। AI অত্যন্ত বাস্তবসম্মত ‘সিন্থেটিক মিডিয়া’ তৈরি করতে পারে, যার মাধ্যমে অপরাধীরা ভুক্তভোগীদের প্রতারিত করতে, অন্যদের ছদ্মবেশ ধারণ করতে এবং তাদের ব্ল্যাকমেইল করতে সক্ষম হচ্ছে।
AI-চালিত কণ্ঠস্বর ক্লোনিং (Voice Cloning) ও লাইভ ভিডিও ডিপফেক (Deepfake) প্রযুক্তির ব্যবহার এই হুমকিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, যা নতুন ধরনের জালিয়াতি, চাঁদাবাজি এবং পরিচয় চুরির জন্ম দিচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কিছু দেশ তাদের ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য অপরাধীদের ব্যবহার করছে। এর প্রমাণ হিসেবে রাশিয়া এবং তার প্রভাবাধীন দেশগুলো থেকে আসা সরকারি অবকাঠামো এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর সাইবার হামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এই ধরনের আক্রমণে সাইবার অপরাধীরা প্রায়ই নিজেদের পরিচয় গোপন করে এবং তাদের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধোঁয়াশা তৈরি করে। পোল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন আন্ডার সেক্রেটারি সম্প্রতি একটি হাসপাতালের ওপর সাইবার হামলার উদাহরণ তুলে ধরেন, যা AI দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল এবং এর কারণে হাসপাতালটির কার্যক্রম কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ ছিল।
ইউরোপোলের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন ডি বোলের মতে, AI এবং অন্যান্য প্রযুক্তি অপরাধের গতি, পরিধি এবং জটিলতা বাড়িয়ে অপরাধীদের কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করে তুলছে। ইউরোপীয় কমিশন একটি নতুন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নীতি তৈরি করতে যাচ্ছে, এমতাবস্থায় ডি বোলে ইউরোপের দেশগুলোকে এই হুমকিগুলো দ্রুত মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় কমিশনার ফর ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড মাইগ্রেশন, ম্যাগনাস ব্রুনার বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউরোপকে সব ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে এবং ইউরোপোল-এর জনবল দ্বিগুণ করার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহ করার লক্ষ্য রয়েছে।
যদিও এই ঘটনাগুলো মূলত ইউরোপের প্রেক্ষাপটে ঘটছে, তবে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের জন্যও এই ধরনের হুমকি দ্রুত বাড়ছে। তাই, আমাদের এখনই সতর্ক হতে হবে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার অপরাধের ঝুঁকিও বাড়ছে। সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: ইউরোপোল