কৃষ্ণ সাগর সংলগ্ন ক্রিমিয়া উপদ্বীপ, যা একদিকে যেমন রাশিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি, তেমনই ইউক্রেনের কাছেও এর রয়েছে বিশেষ কৌশলগত ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উত্তেজনা চলছে।
সম্প্রতি, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ক্রিমিয়ার গুরুত্ব আরও বেড়েছে, কারণ রাশিয়া এই উপদ্বীপকে তাদের সামরিক কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
ক্রিমিয়ার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই অঞ্চলটি বহু সাম্রাজ্যের ক্ষমতার কেন্দ্র ছিল। অষ্টাদশ শতকে রুশ সাম্রাজ্য ক্রিমিয়া দখল করে।
এরপর ১৯৪৪ সালে সোভিয়েত স্বৈরাচার জোসেফ স্তালিন ক্রিমিয়ার প্রায় দুই লক্ষ তাতারকে মধ্য এশিয়ায় নির্বাসিত করেন, যাদের তিনি জার্মানির সঙ্গে সহযোগিতা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্ত করেন।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ক্রিমিয়া ইউক্রেনের অংশ হয়। তবে, কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার নৌবহরের ঘাঁটি থাকার কারণে উপদ্বীপটিতে রাশিয়ার প্রভাব বজায় ছিল।
২০১৪ সালে ইউক্রেনে সরকার পরিবর্তনের পর রাশিয়া ক্রিমিয়াকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্ব।
রাশিয়ার এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
ক্রিমিয়াকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যেকার এই বিরোধ বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রাশিয়া ক্রিমিয়াকে তাদের সামরিক কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যা ইউক্রেনের জন্য উদ্বেগের কারণ।
ইউক্রেনও ক্রিমিয়াকে পুনরুদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে এবং সেখানে ড্রোন হামলাসহ বিভিন্ন সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে।
ক্রিমিয়ার কৌশলগত গুরুত্বের কারণে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ উভয় পক্ষের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রিমিয়ার ঘটনা শুধু একটি আঞ্চলিক বিরোধ নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, তা রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস