কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence – এআই) জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে এনভিডিয়া। তাদের তৈরি করা নতুন চিপ প্ল্যাটফর্ম ‘ব্ল্যাকওয়েল আলট্রা’ মানুষের মতো চিন্তা করার ক্ষমতাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এআই অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে ব্যবহারকারীর হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে সাহায্য করবে, যা চ্যাটবট-এর ধারণাকে ছাপিয়ে বাস্তব জীবনে এআই-এর প্রয়োগের সম্ভাবনা তৈরি করবে।
এনভিডিয়া তাদের বার্ষিক জিটিসি সম্মেলনে ব্ল্যাকওয়েল আলট্রা’র বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে। নতুন এই প্ল্যাটফর্মটি এনভিডিয়ার বিদ্যমান ‘ব্ল্যাকওয়েল’ চিপের উন্নত সংস্করণ।
কোম্পানি জানিয়েছে, ‘আলট্রা’ সংস্করণে অতিরিক্ত কম্পিউটিং শক্তি থাকায় এআই মডেলগুলি জটিল প্রশ্নগুলোকে ভেঙে একাধিক ধাপে উত্তর দিতে এবং বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করতে পারবে। সহজ ভাষায় বললে, এটি এআই-কে আরও বেশি যুক্তিবোধ সম্পন্ন করে তুলবে।
২০২২ সালে ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি আসার পর এআই চিপের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে। এর ফলে এনভিডিয়ার শেয়ারের দামও আকাশ ছুঁয়েছে।
মাইক্রোসফট, অ্যামাজন এবং গুগলের মতো বড় কোম্পানিগুলো তাদের ডেটা সেন্টার এবং ক্লাউড-ভিত্তিক পরিষেবাগুলোতে এনভিডিয়ার চিপ ব্যবহার করে, যা এআই-এর জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ ডেটা প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা করে।
তবে, চীনের প্রযুক্তি বিষয়ক কোম্পানি DeepSeek-এর আর১ মডেল বাজারে আসার পর এআই চিপের বাজারে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ, তাদের মডেলটি যুক্তিবোধের দিক থেকে বেশ উন্নত এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে তৈরি করা হয়েছে বলে জানা যায়।
অনেকে মনে করছেন, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এআই মডেল তৈরি করতে হয়তো এত দামি হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন হবে না। যদিও এনভিডিয়া তাদের জানুয়ারি মাসের আয়ের হিসাব প্রকাশ করে এই ধরনের উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়েছে।
এনভিডিয়া চাইছে, তাদের চিপগুলো যেন DeepSeek-এর মতো যুক্তিবোধ সম্পন্ন মডেল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাদের দাবি, ব্ল্যাকওয়েল আলট্রা ব্যবহার করে DeepSeek R1 এর একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে যেখানে আগের প্রজন্মের ‘হপার’ চিপে ১ মিনিট ৩০ সেকেন্ড সময় লাগতো, সেখানে এখন মাত্র ১০ সেকেন্ড সময় লাগবে।
ব্ল্যাকওয়েল আলট্রা’র উপর ভিত্তি করে নতুন সার্ভার তৈরি করতে সিসকো, ডেল, এইচপি, লেনোভো এবং সুপার মাইক্রো-এর মতো কোম্পানিগুলো কাজ করছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এই চিপ ব্যবহার করে তৈরি হওয়া প্রথম পণ্যগুলো বাজারে আসবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই-এর যুক্তিবোধ সম্পন্ন হওয়া বা কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে ভালোভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা অ্যাপ্লিকেশন এবং এজেন্টদের আরও জটিল ও সুনির্দিষ্ট প্রশ্নগুলো পরিচালনা করতে সহায়তা করবে।
এর ফলে, একটি চ্যাটবট কেবল উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে প্রশ্নটিকে বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন পরিস্থিতি বিবেচনা করে একাধিক সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, এনভিডিয়া উল্লেখ করেছে, যুক্তিবোধ সম্পন্ন একটি মডেল ব্যবহার করে বিয়ের অনুষ্ঠানের বসার স্থান নির্ধারণ করা যেতে পারে, যেখানে বর-কনের পরিবার এবং অন্যান্য অতিথিদের পছন্দকে বিবেচনা করা হবে।
এআই মডেলগুলো এখন মানুষের মতো আচরণ করতে শুরু করেছে।”
শুধু DeepSeek এবং OpenAI নয়, গুগলও তাদের জেমিনি মডেলে যুক্তিবোধের ক্ষমতা যুক্ত করেছে। এছাড়া, ফেব্রুয়ারি মাসে অ্যানথ্রপিক নামক একটি কোম্পানি ‘ক্লড ৩.৭ সনেট’ নামে একটি হাইব্রিড যুক্তিবোধ সম্পন্ন মডেল নিয়ে এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যুক্তিবোধ সম্পন্ন মডেলগুলো ‘এআই এজেন্ট’-এর পথ খুলে দেবে, যা কেবল প্রশ্নের উত্তরই দেবে না, বরং ব্যবহারকারীর হয়ে বিভিন্ন কাজ করতে পারবে।
গুগল, অ্যামাজন এবং কোয়ালকমের মতো কোম্পানিগুলো এমন এআই-চালিত সহকারী তৈরির পরিকল্পনা করছে, যা ব্যবহারকারীর পছন্দ অনুযায়ী তাদের জন্য ভ্রমণের ব্যবস্থা করতে পারবে।
এজেন্টিক এআই একাধিক কাজ করতে পারদর্শী হবে এবং প্রতিটি কাজে যুক্তিবোধ এটিকে আরও দক্ষ করে তুলবে।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন