গ্যারেথ সাউথগেটের ভাষণে তরুণ সমাজের মানসিক স্বাস্থ্য ও সাফল্যের ধারণা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ।
ইংল্যান্ডের সাবেক ফুটবল ম্যানেজার স্যার গ্যারেথ সাউথগেট সম্প্রতি রিচার্ড ডিম্বলবি লেকচারে বক্তব্য রাখেন। বক্তৃতায় তিনি সমাজের তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সাফল্যের প্রচলিত ধারণা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিশেষ করে, তথাকথিত ‘টক্সিক ইনফ্লুয়েন্সার’ বা ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারকারীদের উত্থান নিয়ে তিনি তাঁর উদ্বেগের কথা জানান।
সাউথগেট তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন, বর্তমান সমাজে তরুণদের মধ্যে পিতৃতুল্য আদর্শের অভাব দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাবের কথা তুলে ধরেন।
তিনি মনে করেন, এই ‘ইনফ্লুয়েন্সার’রা তরুণদের ভুল পথে চালিত করছে এবং তাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা তৈরি করছে। তারা সাফল্যের ভুল সংজ্ঞা দেয়, যা তরুণদের মধ্যে হতাশা তৈরি করে।
সাউথগেট তাঁর বক্তৃতায় ১৯৯৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে তাঁর পেনাল্টি মিসের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সেই ঘটনাটি তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
তিনি এরপর বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার, স্কুল এবং এমনকি কারাগারেও গিয়েছেন তরুণদের সমস্যাগুলো বুঝতে। তাঁর মতে, তরুণরা সমাজে নিজেদের স্থান খুঁজে নিতে গিয়ে একাকীত্ব অনুভব করে।
তারা তাদের পুরুষত্ব নিয়ে দ্বিধায় ভোগে এবং সমাজের চোখে নিজেদের অবস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে।
তিনি আরও বলেন, তরুণরা দিকনির্দেশনার জন্য অনলাইনে বেশি সময় কাটায় এবং এর ফলে তারা গেমিং, জুয়া ও পর্নোগ্রাফির মতোunhealthy বিকল্পের দিকে ঝুঁকছে।
এই শূন্যতা পূরণ করতে এগিয়ে আসে কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি, যারা তরুণদের সাফল্যের ভুল সংজ্ঞা দেয়। তাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা।
এই ধরনের ‘ইনফ্লুয়েন্সার’রা তরুণদের বুঝিয়ে থাকে যে, অর্থ ও ক্ষমতা অর্জনের মধ্যেই সাফল্য নিহিত।
সাউথগেট সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের এমন নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে, যারা সঠিক পথের দিশা দেখাবে। তিনি হ্যারি কেন এবং জর্ডান হেন্ডারসনের উদাহরণ টেনে বলেন, খেলোয়াড় হিসেবে তাঁরা তরুণদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, সমাজে এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে যেখানে তরুণদের ভুলকে ভয় না করে, বরং তা থেকে শিখতে উৎসাহিত করা হবে।
সাউথগেট মনে করেন, খেলাধুলায় জয়-পরাজয়ই সব নয়। সাফল্যের সংজ্ঞা আরও ব্যাপক হওয়া উচিত।
প্রত্যেক মানুষের উচিত নিজের সেরাটা দেওয়া এবং সমাজের জন্য ইতিবাচক কিছু করা। সত্যিকারের সাফল্য হলো– নিজের প্রতি সৎ থাকা এবং সমাজের জন্য কিছু করে যাওয়া।
তথ্য সূত্র: The Guardian