অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী এক ব্যক্তির মাথার খুলি, যিনি সম্ভবত উনিশ শতকের শুরুর দিকে শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিকদের হাতে নিহত হয়েছিলেন, তাকে সমাধিস্থ করার জন্য যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাসমানিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাবারডিন বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া দ্বীপে আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে এই অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের দেহাবশেষ সমাধিস্থ করা হবে।
তাসমানিয়ান আদিবাসী কেন্দ্র, যারা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই সমাধিস্থ করার আয়োজন করছে, ২০১৯ সালে স্কটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে প্রত্যাবাসনের প্রস্তাব পায়। পরের বছর এটি অনুমোদিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে এই মাথার খুলিটি সংগ্রহ করেছিল, তার বিস্তারিত তথ্য সীমিত। জানা যায়, এটি মেরিস্শাল কলেজের প্রাকৃতিক ইতিহাসের অধ্যাপক উইলিয়াম ম্যাকগিল্ভরের সংগ্রহে ছিল। মেরিস্শাল কলেজ বর্তমান অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অংশ।
১৮৫২ সালে ম্যাকগিল্ভরের মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয় তার সংগ্রহটি কিনে নেয়। সেই সময়কার বিক্রয় তালিকায় এই দেহাবশেষটিকে ‘ভ্যান ডিমেন’স ল্যান্ডের এক আদিবাসীর’ বলে উল্লেখ করা হয়, যাকে শ্যানন নদীতে গুলি করা হয়েছিল। ভ্যান ডিমেন’স ল্যান্ড ছিল তাসমানিয়ার ঔপনিবেশিক নাম।
মাথার খুলিটি কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিল, তার কোনো লিখিত বিবরণ পাওয়া যায়নি। এটি প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক অ্যানাটমি বিভাগে রাখা হয়েছিল, পরে ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে মানব সংস্কৃতি সংগ্রহশালায় স্থানান্তরিত করা হয়। উনিশ শতক এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এটি চিকিৎসা শিক্ষার কাজে ব্যবহৃত হত।
তাসমানিয়ান আদিবাসী কেন্দ্রের মতে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, শ্যানন নদীতে নিহত হওয়া ওই ব্যক্তির শরীর থেকে এই খুলিটি আলাদা করা হয়েছিল, আদিবাসী দেহের ব্যবসার সুবিধার জন্য।’
সম্ভবত ১৮২০ বা ১৮৩০-এর দশকে সংঘটিত ওই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তারা আরও জানায়, ‘ওই ব্যক্তির শিরশ্ছেদ সম্ভবত হত্যাকারীদের মধ্যে থাকা কোনো খামার মালিক, ভূস্বামী বা তাদের সঙ্গে জড়িত কেউ করে থাকতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যদিও ওই ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব নয়, তবে তিনি ‘বিগ রিভার’ উপজাতির সদস্য ছিলেন এবং এই উপজাতিটি একসময় সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল।
তাসমানিয়ান আদিবাসী কেন্দ্রের এন্ড্রি স্কালথর্প প্রত্যাবাসনের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আদিবাসী মানুষেরা তাদের পূর্বপুরুষদের শারীরিক দেহাবশেষ এবং এর মাধ্যমে তাদের আত্মার স্বদেশে ফিরিয়ে আনার গুরু দায়িত্ব অনুভব করে।”
তিনি আরও বলেন, “এটি মানবজাতির অধ্যয়নের ক্ষেত্রে বর্ণবাদী মনোভাবের একটি প্রমাণ, যেখানে কবর খুঁড়ে এবং অন্যান্য অনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে, এমনকি হত্যার মাধ্যমেও মানুষের দেহাবশেষ সংগ্রহ করা হত। আমরা সেইসব প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা করি, যারা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা ত্যাগ করে, তাদের মানবিকতাকে গ্রহণ করে এবং অতীতে সংঘটিত নৃশংসতার শিকার হওয়া মানুষের প্রতি সঠিক কাজটি করার সাহস দেখিয়েছে। এই যুবকের হত্যাকে আমরা ভুলব না এবং অবশেষে তাকে আমরা তার নিজ বাসভূমে ফিরিয়ে নিয়ে যাব।”
ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাবারডিন জানায়, তাদের সংগ্রহশালা থেকে দেহাবশেষ প্রত্যাবাসনের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া রয়েছে এবং এর আগে তারা একটি বেনিন ব্রোঞ্জও নাইজেরিয়ায় ফেরত পাঠিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘর ও বিশেষ সংগ্রহের প্রধান, নীল কার্টিস বলেন, “যে সহিংসতা ও বর্ণবাদের কারণে এই দেহাবশেষগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল, তা গবেষণা, শিক্ষাদান বা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করাটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আনন্দিত যে এই যুবকের দেহাবশেষ এখন তাসমানিয়ান আদিবাসী কেন্দ্রের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে, যাতে তাকে তার জন্মভূমিতে যথাযথভাবে সমাধিস্থ করা যায়।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন