যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) চলতি বছরে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে সুদের হার কমানোর কারণগুলো বেশ উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
আগে যেখানে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের কারণে সুদের হার কমানোর কথা ভাবা হয়েছিল, সেখানে নতুন করে শুল্ক বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় হ্রাস এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে অর্থনীতির খারাপ পরিস্থিতি সামাল দিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
ফেডারেল রিজার্ভ হলো যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর প্রধান কাজ হলো দেশটির মুদ্রানীতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
গত বছর, ফেড সুদের হার বেশ কয়েকবার কমিয়েছিল। শুরুতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সুদের হার বাড়ানো হয়েছিল, কিন্তু পরে যখন মূল্যস্ফীতি কমে আসে, তখন সেই হার কমানো হয়। গত ডিসেম্বরে ফেড জানায়, তারা সম্ভবত আরও দু’বার সুদের হার কমাতে পারে।
আগে ধারণা করা হচ্ছিল, মূল্যস্ফীতি কমে ২ শতাংশে নেমে আসার কারণে সুদের হার কমানো হবে। কিন্তু বর্তমানে শুল্ক বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় হ্রাস এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।
এখন যদি এমন পরিস্থিতি হয় যে অর্থনীতির খারাপ অবস্থার কারণে সুদের হার কমাতে হচ্ছে, তবে তা উদ্বেগের কারণ হবে।
বর্তমানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক আস্থা কমে আসছে। তারা আশঙ্কা করছেন, আগামী মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।
ছোট ব্যবসার মালিকরাও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছেন। এর ফলে তারা কর্মী নিয়োগ এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক হচ্ছেন।
উচ্চ এবং নিম্ন উভয় শ্রেণির পণ্যের খুচরা বিক্রেতারা সতর্ক করে বলেছেন, শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা ভোক্তাদের মধ্যে আরও বেশি সতর্কতা তৈরি করবে। যদিও গত মাসে খুচরা বিক্রি সামান্য বেড়েছে, তবে জানুয়ারিতে এতে বড় পতন দেখা গিয়েছিল।
নির্মাণ ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, বাড়ি তৈরি এবং সংস্কারের খরচ আরও বাড়তে পারে।
ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা দেখছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির কারণে অর্থনীতির ওপর কী প্রভাব পড়ে।
ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সম্প্রতি বলেছেন, তারা আপাতত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন এবং কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে অপেক্ষা করতে চান।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, চলতি বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। কিছু ব্যাংক তাদের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে।
এর কারণ হিসেবে শুল্ক বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় হ্রাস এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে দায়ী করা হচ্ছে। যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যায় এবং বেকারত্ব বাড়ে, তাহলে ফেডের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়বে।
সাধারণত, এমন পরিস্থিতিতে ফেড সুদের হার কমিয়ে অর্থনীতিকে চাঙা করার চেষ্টা করে। কিন্তু যদি মূল্যস্ফীতি বাড়ে, তাহলে তারা সুদের হার বাড়িয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমাতে চাইবে, যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ফেডারেল রিজার্ভের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতি বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে।
এর প্রভাব বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্সের ওপর পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সুদের হার বাড়লে বা কমলে তা বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি খরচ, বিনিয়োগের প্রবাহ এবং টাকার বিনিময় হারে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, ফেডারেল রিজার্ভের পদক্ষেপের দিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।