গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ ৪৩৬ জন নিহত, ভেঙে গেল যুদ্ধবিরতি।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো ধারাবাহিক বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৪৩৬ জন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরের দিকে গাজাজুড়ে চালানো প্রায় ১০০টি বোমা হামলায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে ১৮৩ জন শিশু, ৯৪ জন নারী, ৩৪ জন বৃদ্ধ এবং ১২৫ জন পুরুষ রয়েছেন। এছাড়াও, অন্তত ৬৭৮ জন গুরুতর আহত হয়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছে।
আল জাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা সানাদ মঙ্গলবার ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চালানো ২৩টি হামলার স্থান চিহ্নিত করেছে। হামলায় গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত জাবালিয়া, বেইত হানুন, গাজা সিটি, নুসেইরাত, দেইর আল-বালাহ, খান ইউনিস এবং রাফাহ-এর মতো এলাকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এমনকি মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য চিহ্নিত আল-মাওয়াসি এলাকার মতো নিরাপদ স্থানও বাদ যায়নি ইসরায়েলি আগ্রাসন থেকে।
গাজা সিটির পশ্চিমাঞ্চলে আল-রান্তিসি শিশু হাসপাতালের সামনে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক নারীসহ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। এছাড়া, বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত দারাজ এলাকার আল-তাবিন স্কুল এবং রাফাহ শহরের উত্তর-পশ্চিমের দার আল-ফাদিলা স্কুলেও বোমা হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে।
দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি হিন্দ খৌদারি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাদ্য ও বিদ্যুতের অভাবে গাজার মানুষ “ভীত, অসহায় এবং বিধ্বস্ত” অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “গাজার মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। তাদের খাবার নেই। প্রায় ৫ লক্ষ ফিলিস্তিনির জন্য জল সরবরাহকারী পানি শোধনাগারটি বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণে কাজ করছে না। এমন পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনিরা গাজার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হামলার শিকার হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার বলেছেন, গাজায় বোমা হামলা “কেবল শুরু” এবং ইসরায়েল তাদের যুদ্ধ লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত – হামাসকে ধ্বংস করা এবং সকল জিম্মিকে মুক্ত করা – অভিযান চালিয়ে যাবে।
রক্তক্ষয়ী হামলায় ইতোমধ্যে অনেক পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছেন রামী আবদুর বোন নাসরিনের পরিবারের সদস্যরা। গাজা সিটিতে ভোর ৪:৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) তাদের বাড়িতে বোমা হামলা চালানো হয়।
রামী আবদু ইউরো-মেডিটেরিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটরের চেয়ারম্যান। নাসরিন, তার সন্তান উবাইদা, ওমর এবং লায়ানের পাশাপাশি উবাইদার স্ত্রী মালাক এবং তাদের শিশু সন্তান সিওয়ার ও মোহাম্মেদসহ পরিবারের সবাই নিহত হয়েছেন।
২০২৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৯0২টি পরিবার সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, অর্থাৎ তাদের পরিবারের সকল সদস্য নিহত হয়েছে। এছাড়াও, ১,৩৬৪টি ফিলিস্তিনি পরিবারে শুধুমাত্র একজন সদস্য জীবিত রয়েছে, আর ৩,৪৭২টি পরিবারে মাত্র দুইজন সদস্য বেঁচে আছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের চলমান হামলায় এ পর্যন্ত ৪৯,৫৪7 জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,১২,৭১৯ জন আহত হয়েছে। এর অর্থ, গাজার প্রতি ৫০ জনের মধ্যে ১ জন নিহত এবং ২০ জনের মধ্যে ১ জন আহত হয়েছে।
ফেব্রুয়ারী মাসের ৩ তারিখে গভার্নমেন্ট মিডিয়া অফিস মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০ জনের বেশি বলে জানায়, যেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা