মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির পথে বাধা, ক্ষতির মুখে মৎস্যজীবীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের মৎস্যজীবীরা পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকতে চাইলেও, সরকারি অর্থছাঁটাইয়ের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষ করে আলাস্কা, ওয়াশিংটন এবং মেইনের মৎস্য ব্যবসায়ীরা এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
পুরনো ডিজেল ইঞ্জিন এবং সমুদ্রের শীতলীকরণ ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য তারা যে ফেডারেল সাহায্য চেয়েছিল, তা হয় স্থগিত করা হয়েছে, অথবা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্মেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (DOGE)-এর মাধ্যমে হওয়া বাজেট কাটছাঁটকে দায়ী করা হচ্ছে।
এই পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য হলো— পুরনো প্রযুক্তি সরিয়ে কার্বন নিঃসরণ কমানো, যা পরিবেশবাদীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই পরিবর্তনের ফলে সামুদ্রিক খাবারের কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাস করা সম্ভব।
ওয়াশিংটন রাজ্যের স্যামন মাছের চাষি, মেইনের স্ক্যালপ সরবরাহকারী এবং আলাস্কার হালিবুট শিকারিরা জানিয়েছেন, নতুন ইঞ্জিন ও রেফ্রিজারেশন সিস্টেমের মতো প্রকল্পের জন্য তাদের ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে পাওয়া প্রতিশ্রুতি হয় বাতিল করা হয়েছে, নয়তো তা পর্যালোচনার অধীনে রয়েছে।
মেইনের একজন সি-ফুড পরিবেশক টোগ ব্রাউন বলেন, “এতে ব্যবসার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সরকার যদি ‘আমেরিকা আবার মহান হোক’ নীতি বাস্তবায়নে আগ্রহী হয়, তাহলে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা উচিত এবং মানুষজনকে সঠিক তথ্য জানানো দরকার।”
সম্প্রতি বছরগুলোতে, পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো মৎস্য শিল্পের কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের ওপর জোর দিয়েছে। মেরিন পলিসি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৬ সালে মাছ ধরার কারণে প্রায় ২০ কোটির বেশি টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়েছে।
যদিও কৃষিক্ষেত্রের তুলনায় এই পরিমাণ কম, তবুও এটি বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন ঘন ঘন ঝড় হচ্ছে এবং অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে ২০২৩ সাল উষ্ণতম বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, তখন বিভিন্ন শিল্পখাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো অত্যন্ত জরুরি।
কিন্তু পরিবেশ-বান্ধব প্রকল্পগুলোর খরচ অনেক বেশি, যা সাধারণত কয়েক হাজার থেকে কয়েক লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই অনেক মৎস্যজীবী এই খরচ মেটানোর জন্য ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (USDA) অথবা এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি (EPA)-এর কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য চেয়ে থাকেন।
কিন্তু ফেডারেল সরকারের ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্যে গঠিত DOGE কমিশন এই দুটি সংস্থাকেও কাটছাঁটের আওতায় এনেছে।
সিয়াটলের রবার্ট বুখমায়র নামের একজন মৎস্যজীবী জানান, তিনি একটি স্যামন মাছ ধরার নৌকার জন্য রেফ্রিজারেশন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন। এই প্রকল্পের জন্য ইউএসডিএ থেকে তিনি ৪৫,০০০ মার্কিন ডলার অনুদানের প্রত্যাশা করেছিলেন।
কিন্তু সংস্থাটি গত মাসে জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এই অর্থ প্রদান স্থগিত করা হয়েছে। বুখমায়র বলেন, “আমি এখন দিশেহারা। কোথা থেকে এই অর্থের ব্যবস্থা করব?
আমি তো ধরে নিয়েছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অনুদান পাওয়া মানেই নিশ্চিত অর্থ পাওয়া। কিন্তু চিঠিতে এমন কিছু বলা ছিল না, যেখানে উল্লেখ থাকবে যে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে এই অর্থ দেওয়া হবে।”
অর্থের অভাবে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। মেইনের স্ক্যালপ প্রস্তুতকারক এবং পরিবেশক টোগ ব্রাউন জানান, তিনি প্রায় ৩৫০,০০০ মার্কিন ডলারের একটি ইউএসডিএ অনুদানের অর্ধেক পেয়েছিলেন, কিন্তু এখন বাকিটা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
তিনি ‘ডেবোট ব্লু’ নামে একটি প্রকল্পের জন্য এই অনুদান পেয়েছিলেন, যার মাধ্যমে সদস্যপদ-ভিত্তিক একটি মডেল ব্যবহার করে মেইন থেকে সারা দেশে সি-ফুড সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল। এর ফলে পরিবহন এবং প্যাকেজিংয়ের কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব হতো।
ব্রাউন বলেন, “এই মডেল মৎস্যজীবী, ভোক্তা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য খুবই উপকারী হতে পারত। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। এই ঘটনা থেকে বাংলাদেশের মৎস্যজীবীদেরও শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র এবং নদ-নদীগুলোতে মাছ ধরা হয়, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তাই পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে মাছ ধরার আধুনিক ও পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে নজর দেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস