বসন্ত এসে গেছে! শুনে নিশ্চয়ই ভালো লাগছে? ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে প্রকৃতির রূপে আসে নতুনত্ব, আর এর সঙ্গেই আসে দিন ও রাতের হিসাবের পরিবর্তন।
এই পরিবর্তনের কারণ হলো মহাকাশে পৃথিবীর অবস্থান। সম্প্রতি, ২১শে মার্চ তারিখে, উত্তর গোলার্ধে শুরু হয়েছে বসন্তকাল, আর দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকাল। এই বিশেষ ঘটনাটি ‘বিষুব’ নামে পরিচিত।
আসলে, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরতে থাকে একটি নির্দিষ্ট কৌণিক অবস্থানে থেকে। এর ফলে, বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর কোনো একটি অংশ সূর্যের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে, আবার কোনো সময় দূরে। এই কারণে, দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যে পার্থক্য দেখা যায়, এবং ঋতু পরিবর্তন হয়।
বিষুবের সময়, পৃথিবীর অক্ষ এমন একটি অবস্থানে আসে, যখন দুই গোলার্ধেই আলো সমানভাবে পৌঁছায়। ফলে, দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য প্রায় সমান থাকে। ‘বিষুব’ শব্দটির মূল অর্থও তাই – ‘সমান রাত’।
তবে, বিষুব আর অয়ণকালের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। অয়ণকাল হলো বছরের সেই দুটি সময়, যখন পৃথিবী সূর্যের দিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকে থাকে। এর ফলে, দিন অথবা রাতের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ২১শে জুনের কাছাকাছি সময়ে উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালীন অয়ণকাল হয়, যেখানে দিনের আলো সবচেয়ে বেশি থাকে। আবার, ২১শে ডিসেম্বরের কাছাকাছি সময়ে শীতকালীন অয়ণকাল হয়, যখন রাতের অন্ধকার সবচেয়ে দীর্ঘ হয়।
আবহাওয়ার হিসেবেও ঋতু পরিবর্তনের একটা হিসাব আছে। এই হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর ১লা মার্চ থেকে গ্রীষ্মকালের শুরু, ১লা জুন থেকে গ্রীষ্মকাল, ১লা সেপ্টেম্বর থেকে শরৎকাল এবং ১লা ডিসেম্বর থেকে শীতকাল গণনা করা হয়।
ঐতিহ্যগতভাবে, বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এই ঋতু পরিবর্তনের উদযাপন করা হয়। যেমন, ইরানের ঐতিহ্যবাহী নববর্ষ ‘নওরোজ’ এই বসন্ত বিষুবের উপর ভিত্তি করে পালিত হয়। মেক্সিকোর চিচেন ইৎজা নামক স্থানে, মায়ানরা এই সময়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে মিলিত হয়, যেখানে সূর্যের আলো এল ক্যাসটিলো নামক একটি পিরামিডের উপর সাপ আকৃতির একটি ছায়া তৈরি করে।
এই সময়ে, বাংলাদেশেও আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। শীতের বিদায়ের পরে প্রকৃতিতে আসে এক নতুন রূপ, যা আমাদের জীবনযাত্রায়ও পরিবর্তন নিয়ে আসে। কৃষিকাজ থেকে শুরু করে উৎসব-অনুষ্ঠান—সবকিছুতেই ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব সুস্পষ্ট।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস