ভারতে ঔরঙ্গজেবের সমাধি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের আশঙ্কা। ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নাগপুরে সপ্তদশ শতকের মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সমাধিকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠন ঔরঙ্গজেবের সমাধি ভেঙে ফেলার দাবি জানাচ্ছে, যার জেরে সেখানে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কারফিউ জারি করেছে এবং বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। মুঘল সাম্রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ শাসক ছিলেন সম্রাট ঔরঙ্গজেব। তাঁর শাসনকালে বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও নীতির কারণে তিনি আজও সমালোচিত হন।
হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো মনে করে, ঔরঙ্গজেব হিন্দুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন এবং তাদের মন্দির ধ্বংস করেছেন।
নাগপুরের পরিস্থিতি। নাগপুরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) নেতৃত্বে একদল বিক্ষোভকারী ঔরঙ্গজেবের সমাধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তাদের দাবি ছিল, ঔরঙ্গজেবের সমাধি ভারতের জন্য একটি কলঙ্কস্বরূপ এবং এটি ভেঙে ফেলা উচিত।
বিক্ষোভকারীরা ঔরঙ্গজেবের কুশপুত্তলিকা দাহ করে এবং সবুজ কাপড়ে মোড়া একটি প্রতিকৃতি পোড়ায়, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তাদের অভিযোগ, কাপড়ের ওপর কোরআনের আয়াত লেখা ছিল।
এর ফলে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়ে এবং সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ মনে করেন, সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া একটি বলিউড চলচ্চিত্র, যেখানে ঔরঙ্গজেবকে খলনায়ক হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, তা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ঔরঙ্গজেবের প্রতি বিদ্বেষ বাড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ফড়নবিশ।
ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ। ঐতিহাসিক অড্রে ট্রুশকের মতে, ঔরঙ্গজেবকে শুধু ধর্মীয় গোঁড়া হিসেবে দেখা সঠিক নয়। তিনি ক্ষমতাকে বেশি গুরুত্ব দিতেন এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতেন।
ঔরঙ্গজেব রাজপুত ও মারাঠাদের মতো প্রভাবশালী হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছিলেন। তবে তিনি কঠোর ইসলামিক আইনও জারি করেন এবং হিন্দুদের ওপর একটি বৈষম্যমূলক কর আরোপ করেন।
সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ। নাগপুরের ঘটনা ছাড়াও, ঔরঙ্গজেবের প্রতি বিদ্বেষ ভারতের বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি, ঔরঙ্গজেবের ছবি নিয়ে মিছিল করার জন্য কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়াও, পাঠ্যপুস্তক থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস সম্পর্কিত অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতের শঙ্কা। নাগপুরের পরিস্থিতি এখনো থমথমে। স্থানীয় বাসিন্দারা নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন।
মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা পুলিশের গ্রেপ্তার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইতিহাসকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া এই বিভেদ ভারতের সমাজে গভীর প্রভাব ফেলছে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা