শিরোনাম: এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ: নিরাপত্তা নাকি স্বচ্ছতা? উদ্বেগে বিশ্বজুড়ে সরকার
বর্তমান ডিজিটাল যুগে, যেখানে তথ্য আদান-প্রদানের দ্রুততা বেড়েছে, সেখানে গোপনীয়তা রক্ষার জন্য এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপগুলির ব্যবহার বাড়ছে। সিগন্যাল (Signal), হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp), টেলিগ্রামের (Telegram) মতো অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এইসব অ্যাপ ব্যবহারকারীদের বার্তা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ নিরাপত্তা দেয়।
কিন্তু এর ফলে সরকারি কাজকর্মের স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরা, যেমন – সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, প্রায় সবাই এখন এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করেন।
এর কারণ হল, হ্যাকিং এবং তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি থেকে নিজেদের বাঁচানো। কিন্তু এর অন্য একটা দিকও আছে। এই অ্যাপগুলির মাধ্যমে পাঠানো বার্তাগুলো সহজে সংরক্ষণ করা যায় না।
অনেক ক্ষেত্রে, বার্তাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যায়। ফলে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, নীতি নির্ধারণ এবং জরুরি অবস্থার মোকাবিলার মতো বিষয়ে জনসাধারণের জানার অধিকার বাধাগ্রস্ত হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, মাউই শহরে ভয়াবহ দাবানলের সময় জরুরি বিভাগের কর্মীরা সিগন্যাল অ্যাপ ব্যবহার করে বার্তা আদান-প্রদান করেছিলেন। এই ঘটনাটি কর্তৃপক্ষের জরুরি অবস্থার মোকাবিলার পদ্ধতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।
কারণ, এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহারের ফলে সরকারি কাজকর্মের বিস্তারিত তথ্যের প্রমাণ খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। জনগণের তথ্য জানার অধিকার সেখানে খর্ব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে চালানো একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১,১০০ জনের বেশি সরকারি কর্মকর্তা ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করেন। এর মধ্যে রাজ্যের আইনপ্রণেতা, গভর্নর অফিসের কর্মচারী, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারাও রয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে, জনগণের তথ্য জানার অধিকার এবং সরকারি গোপনীয়তা রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। অনেক দেশে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সরকার কীভাবে এই সমস্যা মোকাবেলা করবে, তা নিয়ে কাজ করছে।
কিছু রাজ্যে, এনক্রিপ্টেড অ্যাপ ব্যবহারের বিষয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। মিশিগান রাজ্যে সরকারি কর্মীদের জন্য সরকারি ডিভাইসে এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যদি এর ফলে জনগণের তথ্য জানার অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে, এই ধরনের আইনের কার্যকর প্রয়োগ বেশ কঠিন। কারণ, এত বিপুল সংখ্যক সরকারি কর্মীর ব্যক্তিগত ডিভাইস এবং তাদের কার্যকলাপের ওপর নজর রাখা সময়সাপেক্ষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যার সমাধানে তথ্য অধিকার আইন (Right to Information Act) আরো শক্তিশালী করতে হবে। সরকারের উচিত হবে, এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করা, যেখানে এই অ্যাপগুলোর মাধ্যমে হওয়া সমস্ত যোগাযোগ সংরক্ষণ করা যাবে।
একইসঙ্গে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে, যা প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করাটাও জরুরি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস