ক্রিপ্টোকারেন্সি জগৎ এখন নতুন মোড় নিচ্ছে, যেখানে মার্কিন সরকার একে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এখনো দ্বিধা রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একদিকে যেমন এর সমর্থকেরা একে আর্থিক লেনদেনের এক নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখছেন, তেমনি এর ঝুঁকি ও অস্থিরতা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে গভীর উদ্বেগ। বর্তমানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্প বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়ে দাঁড়িয়ে আছে।
দেশটির সরকার এর প্রতি নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে, যা এই শিল্পের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC) জনসাধারণের জন্য আলোচনা সভার আয়োজন করছে, যেখানে ক্রিপ্টো সম্পদের নিয়ন্ত্রন সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ক্রিপ্টো কোম্পানিগুলোর জন্য ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে একই সময়ে, সরকারের নীতিগত কিছু পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। বিটকয়েনের দাম তার আগের সর্বোচ্চ স্তর থেকে প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক এবং “দ্য ফিউচার অফ মানি” বইয়ের লেখক ঈশ্বর প্রসাদের সঙ্গে কথা বলে ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু ধারণা পাওয়া গেছে। তিনি ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে একজন বাস্তববাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেছেন, যা এই বিষয়ে আগ্রহী অনেকের কাছেই নতুনত্ব যোগ করেছে।
অধ্যাপক প্রসাদ মনে করেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রযুক্তি উদ্ভাবনী হলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে অসাধারণ, তবে এটি সব সমস্যার সমাধান কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বিট কয়েন তার মূল লক্ষ্য অর্জনে এখনো সফল হয়নি। এটি তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতাকারী বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজন ছাড়াই লেনদেনের একটি মাধ্যম হিসেবে তৈরি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি একটি নিছক বিনিয়োগের পণ্যে পরিণত হয়েছে।
ব্লকচেইন প্রযুক্তির অনেক সুবিধা রয়েছে, যেমন সহজে ব্যবহারযোগ্যতা, স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা। তবে সব ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির প্রয়োজন আছে কিনা, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
প্রচলিত আর্থিক ব্যবস্থায় এখনো অনেক দুর্বলতা রয়েছে, যা ক্রিপ্টোকারেন্সি দূর করতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। উদাহরণস্বরূপ, আন্তর্জাতিক লেনদেনে বেশি সময় লাগা এবং অতিরিক্ত ফি-এর বিষয়টি এখনো একটি সমস্যা।
অধ্যাপক প্রসাদ আরও উল্লেখ করেছেন, সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি রিজার্ভ তৈরি করার যে পরিকল্পনা করছে, তার ফলে স্বল্পমেয়াদে ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম বাড়তে পারে। তবে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে তিনি সন্দিহান।
তার মতে, এই ধরনের রিজার্ভের ধারণা কৌশলগতভাবে খুব একটা উপযুক্ত নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারের এই পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষা হতে পারে। ডিজিটাল মুদ্রা এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি, এর ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
বিশেষ করে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামোর ওপর জোর দিতে হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন