পূর্ব আফ্রিকার দেশ কঙ্গো’র পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠী এম২৩ গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর দখল করে নিয়েছে। বুধবার (আজ) তারা উত্তর কিভু প্রদেশের খনি শহর ওয়ালিকাল দখল করে নেয়।
স্থানীয় সূত্র এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ খবর প্রকাশ করেছে। সংবাদ মাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, রুয়ান্ডার সমর্থনপুষ্ট এম২৩ বিদ্রোহীরা প্রায় কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই শহরটি দখল করে নেয়।
জাতিসংঘের রেডিও’র বরাত দিয়ে জানা যায়, রুয়ান্ডা সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের সহায়তা করেছে। এলাকার নিরাপত্তা সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে যে শহরটি এম২৩-এর দখলে।
কঙ্গোর সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, ‘ওয়ালিকালের কেন্দ্র এখন এম২৩-এর নিয়ন্ত্রণে। আমরা মানুষ বাঁচানোর জন্য পিছিয়ে এসেছি।’ বর্তমানে তারা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছেন।
ওয়ালিকালের একজন সমাজকর্মী রয়টার্সকে বলেন, ‘বিদ্রোহীরা এখন শহরের কেন্দ্রে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। কমপক্ষে সাতজন আহত ব্যক্তিকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
এম২৩ এর একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ওয়ালিকালের ওপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ওয়ালিকাল দখলের মাধ্যমে ২০১২ সালে আত্মপ্রকাশের পর এম২৩-এর বাহিনী কঙ্গোর অভ্যন্তরে সবচেয়ে বেশি দূর পর্যন্ত প্রবেশ করলো।
অন্যদিকে, কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স সিসেকেদি এবং রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে কাতারের রাজধানী দোহায় এক বৈঠকে মিলিত হয়ে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সব ধরণের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
ওয়ালিকালের জনসংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এটি কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম শহর গোমা থেকে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এছাড়া, কঙ্গোর চতুর্থ বৃহত্তম শহর কিসাঙ্গানি থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪০০ কিলোমিটার।
আল জাজিরার সাংবাদিক অ্যালাইন উয়াকানি গোমা থেকে জানিয়েছেন, ওয়ালিকালের বাসিন্দারা এম২৩-এর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে।
বেশিরভাগ মানুষ প্রতিবেশী কিসাঙ্গানি প্রদেশের দিকে যাচ্ছে, যেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারবে।’ এর আগে, এম২৩ বাহিনী গোমা থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ন্যাক্সিওন্দো শহর দখল করে।
ফেব্রুয়ারিতে তারা দক্ষিণ কিভু প্রদেশের রাজধানী বুকাভুও দখল করে নেয়। এম২৩-এর এই আগ্রাসনের কারণে খনি কোম্পানি আলফামিন তাদের কর্মীদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে এবং ওয়ালিকালে অবস্থিত টিনের আকরিক ক্যাসিটেরাইটের বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম খনিটিতে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।
এই অঞ্চলে সোনারও বেশ কয়েকটি খনি রয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, রুয়ান্ডা এম২৩-কে অস্ত্র সরবরাহ ও সৈন্য পাঠিয়ে সহায়তা করছে।
যদিও রুয়ান্ডা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কঙ্গো এবং এম২৩-এর মধ্যে মঙ্গলবার (গতকাল) সরাসরি আলোচনার কথা ছিল, যা অ্যাঙ্গোলাতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
তবে এম২৩ তাদের নেতাদের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা এবং রুয়ান্ডান কর্মকর্তাদের দায়ী করে সোমবার (আজ) আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। কঙ্গো রিভার অ্যালায়েন্সের (এএফসি) নেতা কর্নেল নাঙ্গাও রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের দাবি না শোনা পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘দোহায় যা হয়েছে, তার বিস্তারিত আমরা জানি না। যতক্ষণ পর্যন্ত এটি আমাদের সমস্যার সমাধান না করে, ততক্ষণ আমরা বলব এটি আমাদের উদ্বেগের বিষয় নয়।’ জাতিসংঘের মতে, এই সংঘাতের কারণে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা