বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী সুদীক্ষা কোনানকীর মৃত্যুর আইনি স্বীকৃতি চাইছে পরিবার।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুদীক্ষা কোনানকীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তার পরিবার গভীর শোকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ডমিনিকান রিপাবলিকে নিখোঁজ হওয়ার পর, সুদীক্ষার বাবা-মা চাচ্ছেন, সেখানকার কর্তৃপক্ষ যেন তাদের মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে।
সিএনএন সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা বিশ্বাস করেন সুদীক্ষার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে।
খবরে প্রকাশ, সুদীক্ষার বাবা-মা, সুব্বারায়ুডু এবং শ্রীদেবী কোনানকী, ডমিনিকান কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তাদের মেয়ের মৃত্যুর আইনি ঘোষণার জন্য অনুরোধ করেছেন।
চিঠিতে তারা লেখেন, তদন্তকারীরাও মনে করছেন সুদীক্ষার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে এবং এতে কোনো ধরনের ‘ফাউল প্লে’ বা অস্বাভাবিক ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পরিবারটি আরও জানায়, তারা ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রের আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা পালনে প্রস্তুত। তাদের মতে, এই প্রক্রিয়া শুরু হলে শোকের এই সময়ে তারা কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হতে পারবেন এবং সুদীক্ষার অনুপস্থিতিতে তাদের অন্যান্য বিষয়গুলো দেখাশোনা করতে সুবিধা হবে।
সুদীক্ষার পরিবারের বাস যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের লাউডাউন কাউন্টিতে। সেখানকার শেরিফ অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা শোকাহত পরিবারের এই ইচ্ছাকে সমর্থন করে।
তবে, বিষয়টি ডমিনিকান কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারের মধ্যে। তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রের আইনজীবী জুলিও কুরি সিএনএনকে জানিয়েছেন, সাধারণত, কোনো ব্যক্তির মরদেহ অথবা কোনো অপরাধের প্রমাণ না পাওয়া গেলে, সেখানে কাউকে মৃত ঘোষণা করা হয় না।
সেক্ষেত্রে, দেশটির কংগ্রেস অথবা প্রেসিডেন্টের বিশেষ আইনের মাধ্যমে এই কাজটি করতে হয়। এই প্রক্রিয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই বলেও তিনি জানান।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর সনদ তৈরি করতে হলে তাদের স্থানীয় ‘মৃত্যু সনদ’-এর মূল কপি জমা দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়ার পর কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে তাকে মৃত ঘোষণা করা যায়। ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক নাওমি কান সিএনএনকে বলেছেন, এখানকার আইনে, কোনো ব্যক্তি যদি সাত বছর ধরে নিখোঁজ থাকেন, তাহলে তাকে মৃত ঘোষণা করার সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া, যদি এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে কারো জীবন ‘সংকটাপন্ন’ অবস্থায় ছিল, তাহলে সাত বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়া যেতে পারে।
লাউডাউন কাউন্টি শেরিফ অফিস জানিয়েছে, তারা ভিকটিম অ্যাডভোকেট ইউনিটের মাধ্যমে পরিবারটিকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে সহায়তা করছে।
আইনজীবীরা বলছেন, পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়ের মৃত্যুর ঘোষণার কারণ হতে পারে, তারা তাদের মেয়ের প্রতি সম্মান জানাতে চায়। তারা চান, যেহেতু তাদের কাছে থাকা সব প্রমাণ বলছে, সুদীক্ষার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে, তাই যেন তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আরেকজন আইনজীবী জানিয়েছেন, মৃত্যুর ঘোষণার মাধ্যমে সুদীক্ষার সম্পত্তি দেখাশোনার পথ সুগম হবে। যেমন, তার নামে যদি কোনো কলেজ সঞ্চয় প্রকল্প বা বীমা পলিসি থাকে, তবে সেগুলো থেকে পাওয়া অর্থ পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
মৃত্যুর সনদ না পাওয়া পর্যন্ত এসব বিষয় অচল থাকে। এছাড়া, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর ঘোষণা না হলে, তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হয় এবং কোনো ধরনের মামলা করারও সুযোগ থাকে না।
সুদীক্ষার পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ধরনের মামলার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
সুদীক্ষার ঘটনা ২০০৫ সালে আরুবায় নিখোঁজ হওয়া ১৮ বছর বয়সী নাটালি হলোওয়ের ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। নাটালীর বাবা, মেয়ের মৃত্যুর ঘোষণার জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন।
২০১৩ সালে আদালত তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন