ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে, যেখানে রাশিয়ার সেনারা এখনো ঘাঁটি গেড়ে আছে।
এই কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে জল্পনা চলছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে আনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, মালিকানা নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ইউক্রেনেরই থাকবে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই জাপোরিঝিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এই কেন্দ্রটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ইউক্রেনের বিদ্যুতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল।
যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে কেন্দ্রটি এখন গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়াও, কাছেই অবস্থিত একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে কুলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পানির সরবরাহও ব্যাহত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করা বেশ কঠিন। এর জন্য প্রয়োজন নিরাপদ পরিস্থিতি, যা বর্তমানে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
কেন্দ্রের চারপাশে প্রায়ই গোলাবর্ষণ হচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জাপোরিঝিয়ার মতো প্রযুক্তি-সম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই।
কারণ এই কেন্দ্রটি সোভিয়েত আমলে তৈরি করা হয়েছিল এবং এর প্রযুক্তি ভিন্ন।
তবে, ইউক্রেন সরকার চাইছে, কেন্দ্রটি পুনরুদ্ধারের কাজে তারা সরাসরি যুক্ত থাকুক। তাদের মতে, এটি তাদের ভূমি এবং তাদের সম্পদ।
তারা এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের সম্ভাবনা বিবেচনা করতে রাজি আছে।
জাপোরিঝিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য জরুরি। কারণ এর যেকোনো দুর্ঘটনা পুরো বিশ্বের জন্য মারাত্মক হুমকি ডেকে আনতে পারে।
যেমনটি আমরা দেখেছি চেরনোবিল দুর্ঘটনার সময়। এই ঘটনার ফলে শুধু ইউক্রেন নয়, বরং অনেক দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করতে দুই বছর বা তার বেশি সময় লাগতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রটি নিরাপদভাবে পরিচালনা করতে হলে প্রথমে এর চারপাশে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সেইসঙ্গে, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পানির নিরবচ্ছিন্ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমানে, কেন্দ্রটিতে কর্মরত কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। কারণ তাদের প্রায়ই বন্দুকের নলের নিচে কাজ করতে হচ্ছে।
যদি কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করাও হয়, তবে রাশিয়ার দিক থেকে কোনো ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে, তা দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে দ্রুত একটি সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এটি শুধু ইউক্রেনের জন্য নয়, বরং বিশ্ব শান্তির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন