মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ২০০ জন ভেনেজুয়েলীয় নাগরিককে তাদের শরীরে আঁকা ট্যাটুর কারণে জঙ্গি সন্দেহে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনা বর্তমানে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, সাধারণ কিছু ট্যাটুকে অপরাধের প্রমাণ হিসেবে ভুলভাবে উপস্থাপন করে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনার পেছনে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্দেশে জারিকৃত একটি পুরনো যুদ্ধকালীন আইনের অপব্যবহার করা হয়েছে। জানা গেছে, ফেরত পাঠানো ভেনেজুয়েলীয় পুরুষদের ‘ট্রেন দে আরাগua’ নামক একটি কুখ্যাত গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
গ্যাংটির উৎপত্তিস্থল ভেনেজুয়েলাতে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা একটি ঘোষণার মাধ্যমে এই গ্যাংটিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই যুক্তিতেই মূলত যুদ্ধকালীন আইনের আশ্রয় নিয়ে তাদের বিতাড়িত করা হয়।
তবে আইনজীবীরা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তাদের মতে, গ্যাং সদস্য প্রমাণের জন্য সরকার কোনো উপযুক্ত প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। এমনকি বিতাড়িত হওয়ার আগে ভেনেজুয়েলীয়দের তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করারও সুযোগ দেওয়া হয়নি।
সাধারণত লাতিন আমেরিকার কিছু গ্যাংয়ের সদস্যদের মধ্যে ট্যাটু আঁকার প্রবণতা দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, এল সালভাদরের কুখ্যাত এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্যদের শরীরে আঁকা ট্যাটু বিশেষভাবে পরিচিত।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ট্রেন দে আরাগua’ গ্যাংয়ের ক্ষেত্রে ট্যাটুকে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তাছাড়া, আজকাল ট্যাটু শুধুমাত্র একটি ফ্যাশন বা শরীরের সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
আইনজীবীদের মতে, কারো শরীরে মুকুটের ট্যাটু দেখলে কোনো কোনো সময় এটিকে ‘ট্রেন দে আরাগua’ অথবা যুক্তরাষ্ট্রের ‘ল্যাটিন কিং’ গ্যাংয়ের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু ইন্টারনেটে মুকুটের বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন উপলব্ধ রয়েছে, যা যেকোনো সাজের সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে।
একইভাবে, তারকা বা ঘড়ির ট্যাটুকেও প্রায়ই গ্যাংয়ের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যদিও এর কোনো সুনির্দিষ্ট অর্থ নাও থাকতে পারে। নিউ ইয়র্ক সিটি পাবলিক ডিফেন্ডার নন-প্রফিট ‘দ্য ব্রঙ্কস ডিফেন্ডারস’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কার্লা ওস্টোলাজা বলেন,
অনেক সময় ট্যাটুর কোনো বিশেষ অর্থ থাকে না। কিন্তু কোনো ভেনেজুয়েলার নাগরিকের শরীরে এই ধরনের ট্যাটু দেখলে এটিকে অপরাধ, বিপদ এবং গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত করে দেখা হয়।”
আদালতের নথিতে জে.জি.জি. নামে পরিচিত একজন ভেনেজুয়েলীয় নাগরিকের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি জানান, কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার ট্যাটুকে গ্যাং সদস্যের প্রমাণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল। জে.জি.জি. জানান, তিনি গুগলে সার্চ করে একটি চোখের ডিজাইন পছন্দ করে ট্যাটু করিয়েছিলেন।
আরেকজন ভেনেজুয়েলীয় নাগরিক, জার্সি রেইস বারিয়োস (৩৬)-এর আইনজীবী লিনেট টোবিন আদালতে হলফনামা পেশ করে জানান, কর্তৃপক্ষের দাবি, জার্সি রেইসের শরীরে একটি ফুটবল এবং মুকুটের ট্যাটু ছিল, যার সঙ্গে ‘ডিওস’ (ঈশ্বর) শব্দটি লেখা ছিল।
এই ট্যাটুর কারণে তাকে ‘ট্রেন দে আরাগua’ গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। লিনেট জানান, জার্সি পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন এবং তার পছন্দের দল স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের লোগোর মতো দেখতে একটি মুকুটের ট্যাটু তিনি করিয়েছিলেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস