ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বয়ন শিল্প, যা মুম্বাইয়ের কাছে অবস্থিত, ধীরে ধীরে তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে। এটি হলো ভারতের ভিওয়ান্ডি শহরের পাওয়ার লুম (power loom) শিল্প।
একসময় এই শিল্প কেন্দ্রটি ছিল শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের এক নির্ভরযোগ্য জায়গা। কিন্তু বর্তমানে, সুতার দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুতের উচ্চ মূল্য এবং চীনের সস্তা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণে এখানকার অনেক তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে।
পুরনো প্রযুক্তির কারণে আধুনিক যন্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারাও এর অন্যতম কারণ।
ভিওয়ান্ডির পাওয়ার লুম শিল্প, যা একসময় দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল, এখন টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে। এখানকার কারিগরদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ তাদের রুটি-রুজির পথ ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে।
জানা গেছে, এখানকার প্রায় ৩০ শতাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক এবং মালিকদের অনেকেই এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
৭০ বছর বয়সী আব্দুল সাত্তার, যিনি ১৫ বছর বয়সে ভিওয়ান্ডিতে এসেছিলেন, সেই সময়ে পাওয়ার লুম শিল্প ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা ধরে শব্দপূর্ণ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করেছেন।
তার মতে, “আমি সবসময় চেয়েছি আমার পরিবারকে ভালোভাবে রাখতে। যতদিন শরীর সাথ দেবে, কাজ করে যাবো। তবে আমি চাই না আমার ছেলে এই পেশায় আসুক।”
আরেকজন, ইশতিয়াক আহমেদ আনসারি, যিনি এক সময় ১১০টি পাওয়ার লুমের মালিক ছিলেন, চার বছর আগে ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি এখন অন্য একটি কারখানায় ঠিকাদারের কাজ করেন। তার ভাষায়, “একসময় এই শিল্প ছিল কৃষির পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত। এখন এর এই অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হয়।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে, ভিওয়ান্ডিতে এখনো প্রায় ৩ লক্ষ পাওয়ার লুম চালু আছে। মালিকরা আধুনিকায়নের জন্য ঋণ নেবেন কিনা, সেই বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।
তবে আব্দুল সাত্তারের মতো অনেক শ্রমিক এই পেশাতেই টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। তাদের একটাই আশা, কোনোভাবে যেন জীবনটা চলে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিওয়ান্ডির এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প (RMG sector)-এর মতো এখানেও শ্রমিকদের অধিকার, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস