যুক্তরাজ্য (ইউকে) ক্রমশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে তাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাইছে। এর কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে একদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য নেতৃত্বাধীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতি এবং অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসী মনোভাব।
ব্রেক্সিট-এর কারণে উদ্ভূত জটিলতা সত্ত্বেও, যুক্তরাজ্য এখন ইউরোপের সামরিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
ব্রেক্সিটের ফলে ইইউ’র সদস্য না হওয়ায় যুক্তরাজ্যকে প্রথমে ইইউ-এর ১৫ হাজার কোটি ইউরোর প্রতিরক্ষা বিনিয়োগ প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়েছিল। তবে, এখন উভয় পক্ষের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা চলছে।
এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের প্রস্তুতকারকদের জন্য প্রকল্পের ৩৫ শতাংশ অর্থ ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হতে পারে। যদিও এই হার পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে এবং সফল আলোচনার মাধ্যমে তা বাড়ানো যেতে পারে।
যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টি দীর্ঘদিন ধরেই ইইউ’র সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করার পক্ষে। তাদের মতে, এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা শিল্পকে আরও শক্তিশালী করা যাবে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা শিল্পে প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ জন কাজ করেন এবং এর ৭০ শতাংশই লন্ডন ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বাইরে অবস্থিত। বারো, রসাইথ, ওয়ার্টন এবং স্যামলেসবুরির মতো শিল্পাঞ্চলগুলো স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সম্প্রতি, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করার এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান বন্ধ করার মতো ঘটনাগুলো যুক্তরাজ্যের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। কারণ, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এমন পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরবরাহকৃত অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং যুদ্ধবিমানগুলোর কার্যকারিতা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘদিনের সামরিক সহযোগিতা থাকলেও, ভবিষ্যতে জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে যুক্তরাজ্য এখন ইউরোপের সঙ্গে তাদের প্রতিরক্ষা এবং শিল্প সম্পর্ক আরও গভীর করতে চাইছে।
যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি একটি নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত বহন করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান