**মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দপ্তর বিলুপ্ত করার নির্বাহী আদেশে বিতর্ক, আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি**
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিক্ষা দপ্তর গুটিয়ে ফেলার নির্বাহী আদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক সংগঠন এবং ডেমোক্রেটিক রাজনীতিবিদরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
আমেরিকান ফেডারেশন অফ টিচার্স (এএফটি) সরাসরি বলেছে, “দেখা হবে আদালতে।”
এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে শিক্ষক সংগঠনগুলোর প্রধান উদ্বেগ হলো এর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব। এএফটি’র প্রধান র্যান্ডি ওয়েইনগার্টেন, যিনি ১৮ লক্ষ শিক্ষকের প্রতিনিধিত্ব করেন, এই আদেশের একদিন আগেই এর প্রতিবাদ জানান।
নিউ ইয়র্ক সিটির ২ লক্ষ শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীর প্রতিনিধিত্বকারী ইউনাইটেড ফেডারেশন অফ টিচার্সের প্রেসিডেন্ট মাইকেল মুলগ্রেউ বলেন, “আমরা আমাদের জাতীয় সংগঠন এবং শিক্ষাখাতের মিত্রদের সঙ্গে মিলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করব। আমরা এই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করছি।”
অন্যদিকে, এই সিদ্ধান্তের সমালোচকরা মনে করেন, এর ফলে শিক্ষাব্যবস্থায় আর্থিক সংকট তৈরি হবে। শিক্ষার সুযোগ কমে আসবে, ক্লাসরুমের আকার বৃদ্ধি পাবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়তার পরিমাণ হ্রাস পাবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জনমত জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ মার্কিনি শিক্ষা দপ্তর বিলুপ্ত করার বিপক্ষে। একটি জরিপে দেখা গেছে, ৫৫ শতাংশ মানুষ দপ্তরটি বন্ধ করার বিরোধিতা করেন।
তবে রিপাবলিকানদের মধ্যে এই বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। তাদের কেউ কেউ মনে করেন, শিক্ষাখাতে রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো উচিত। জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে শিক্ষাসচিব মার্গারেট স্পেলিংগস বলেন, কংগ্রেসে রিপাবলিকানরা সাধারণত দপ্তর বিলুপ্তির পক্ষে কথা বললেও, তাদের এলাকার স্কুলগুলোতে ফেডারেল তহবিলের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে ভোট দেন এর বিপক্ষে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দপ্তরের প্রধান কাজ হলো ফেডারেল তহবিল বিতরণ করা এবং শিক্ষার অধিকার রক্ষা করা। এই দপ্তরটি Title IX-এর মতো নাগরিক অধিকার আইনগুলো কার্যকর করে, যা লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নিষিদ্ধ করে।
বারাক ওবামার আমলে শিক্ষাসচিব জন কিং জুনিয়র বলেন, “আমি মনে করি, কংগ্রেসের উভয় দলই দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলো বজায় রাখতে সমর্থন জানাবে।” তিনি আরও বলেন, “দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য সরাসরি সহায়তা প্রদান, ফেল (Pell) অনুদান কর্মসূচি এবং শিক্ষাঋণ কর্মসূচি, যা আমেরিকানদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেয়, এগুলো অব্যাহত রাখা দরকার।”
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর, শিক্ষাসচিব হিসেবে নিযুক্ত হওয়া প্রাক্তন রেসলিং তারকা লিন্ডা ম্যাকমোহন একে একটি “ঐতিহাসিক পদক্ষেপ” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “আমরা শিক্ষাখাতকে পুনরায় রাজ্যগুলোর হাতে ফিরিয়ে দিচ্ছি, যেখানে এর সঠিক স্থান।” তবে জন কিং একে একটি “কথার ফুলঝুরি” বলে উল্লেখ করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, উন্নত বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং নীতি আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।
বিশেষ করে, শিক্ষাখাতে সরকারি অর্থায়ন, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং সকলের জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উভয় দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় করা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান