ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস: সুস্থ জীবনের এক নতুন দিগন্ত?
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলতেই থাকে, যেখানে ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস (Mediterranean diet) এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। শুধু একটি ডায়েট হিসেবেই নয়, বরং এটি একটি জীবনধারণের পদ্ধতি, যা স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ জীবনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, এই খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্মৃতিভ্রংশতা (dementia) এবং ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ প্রতিরোধের সহায়ক।
ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস আসলে কি?
এই খাদ্যাভ্যাস মূলত ১৯৫০-এর দশকে পরিচিতি লাভ করে। সেই সময়, বিজ্ঞানীরা ভূমধ্যসাগরের আশেপাশে বসবাস করা মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তারা দেখেন যে গ্রিস, ইতালি এবং অন্যান্য অঞ্চলের মানুষেরা হৃদরোগে তুলনামূলকভাবে কম আক্রান্ত হন।
এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তাদের খাদ্য তালিকায় উদ্ভিজ্জ খাবার, যেমন – ফল, সবজি, শস্য এবং স্বাস্থ্যকর চর্বির (healthy fats) আধিক্য। এই খাদ্যাভ্যাসে মাছ ও হালকা প্রোটিনের ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য।
ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস-এর উপকারিতা:
১. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: এই খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বিশেষভাবে সহায়ক। প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি এবং স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহারের কারণে হৃদরোগের সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
২. মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: নিয়মিত এই খাদ্যাভ্যাস গ্রহণের ফলে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে এবং আলঝেইমারের মতো স্মৃতিভ্রংশতা রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক: ক্যান্সার প্রতিরোধেও এই খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: ওজন কমানো বা নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রেও এই খাদ্যাভ্যাস বেশ কার্যকর। এটি শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে এবং দীর্ঘ সময় ধরে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: এই খাদ্যাভ্যাস ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
৬. প্রদাহ কমায়: এই খাদ্যাভ্যাসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান বেশি থাকে, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
এই খাদ্যাভ্যাস কিভাবে অনুসরণ করা যায়?
এই খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা খুব সহজ।
খাদ্য তালিকায় স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য খাবার যুক্ত করা যেতে পারে:
ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস শুধু একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসই নয়, বরং এটি একটি সুস্থ জীবন ধারণের চাবিকাঠি। এটি আমাদের দেশের মানুষের জন্য হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধের একটি কার্যকর উপায় হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক