যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দপ্তর বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিবন্ধী শিশুদের সুযোগ-সুবিধা কমে যাওয়ার আশঙ্কা।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দপ্তর গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন অভিভাবক, শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট অধিকারকর্মীরা। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থ কমে যাবে এবং তাদের শিক্ষা বিষয়ক অধিকার রক্ষার বিষয়টি দুর্বল হয়ে পড়বে। সম্প্রতি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই দপ্তরটি বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা এরই মধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা বিষয়ক অধিকার রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন রয়েছে, যার নাম ‘ইন্ডিভিজুয়ালস উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ এডুকেশন অ্যাক্ট’ (Individuals with Disabilities Education Act – IDEA)। এই আইনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা লাভের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
একইসঙ্গে, তাদের বিশেষ প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষা প্রদানের জন্য ‘ইন্ডিভিজুয়ালাইজড এডুকেশন প্রোগ্রাম’ (IEP) তৈরি করারও বিধান রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দপ্তর, যা দেশটির শিক্ষা বিষয়ক নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, প্রতি বছর এই IDEA আইনের অধীনে প্রায় ৭৪ লক্ষ শিক্ষার্থীর জন্য ১৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু দপ্তরটি বন্ধ হয়ে গেলে এই সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মারিবল গার্দেয়া নামের এক মা তার ১৪ বছর বয়সী বাক-প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য ক্লাসরুমে আই-গেজ ডিভাইস (eye gaze device) চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বহু বছর ধরে চেষ্টা চালিয়েছিলেন। অবশেষে শিক্ষা দপ্তরের হস্তক্ষেপে তার সন্তানের জন্য এই ডিভাইস পাওয়া যায়।
এই ডিভাইসের মাধ্যমে তার ছেলে চোখের ইশারায় যোগাযোগ করতে পারত। গার্দেয়া মনে করেন, শিক্ষা দপ্তর বন্ধ হয়ে গেলে এমন অনেক শিশুর অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবেন।
এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে সেই সকল পরিবার, যাদের শিশুরা বিদ্যালয়ে বিশেষ সহায়তা পায়। কেরি রড্রিগেজ, যিনি ‘ন্যাশনাল প্যারেন্টস ইউনিয়ন’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, তার মতে, শিক্ষা দপ্তর দুর্বল হয়ে পড়লে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য ন্যায়বিচার পেতে সমস্যা সম্মুখীন হবেন।
কারণ, অনেক পরিবারের পক্ষে আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে, ‘দ্য আর্ক’ নামক একটি সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাটি নীস মনে করেন, শিক্ষা দপ্তর শুধু বিদ্যালয়গুলোর ওপর নজরদারিই করে না, বরং শিশুদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হলে তাদের জন্য প্রতিকারের ব্যবস্থাও করে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষা দপ্তর বন্ধ হয়ে গেলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব দেখা দিতে পারে। এর ফলে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
জেনিফার গ্রেভস নামের একজন বিশেষ শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষক মনে করেন, সরকারি সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যালয়গুলোকে তাদের নিজস্ব অর্থায়নে এসব সুবিধা চালু রাখতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ ও কঠিন হবে।
তবে, অনেক অভিভাবক এই পরিস্থিতিতেও তাদের সন্তানদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাদের মতে, শিশুদের ভালো ভবিষ্যতের জন্য তারা কোনো আপস করতে রাজি নন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য সরাসরি কোনো প্রভাব না পড়লেও, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
আমাদের দেশেও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা ও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন