গাজায় ইসরায়েলি হামলায় হামাস নেতা নিহত, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের একজন শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন। রবিবার ভোরে খান ইউনিসে চালানো হামলায় নিহত হন সালাহ আল-বারদাউইল এবং তাঁর স্ত্রী।
ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, নিহত বারদাউইল হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ইসরায়েলের এই হামলাকে তারা ‘হত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তাঁদের রক্ত, তাঁদের স্ত্রীর রক্ত এবং শহীদদের রক্ত আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করবে। এই হত্যাকারী শত্রুরা আমাদের মনোবল ভাঙতে পারবে না।’
অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। গত সপ্তাহে ইসরায়েল গাজায় হামলা জোরদার করার পর থেকে বেশ কয়েকজন সিনিয়র হামাস নেতা নিহত হয়েছেন।
রবিবার ভোর রাতের হামলায় অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রাফাহ’র তাল আল-সুলতান এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে যেতে বলেছে।
গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত দেইর আল-বালাহ থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজ্জুম জানিয়েছেন, গত কয়েক ঘণ্টায় ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক।
ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার পর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, হাসপাতাল, স্কুল ও মসজিদের ওপর হামলা শুরু করেছে। তবে ইসরায়েলি সেনা ও হামাস যোদ্ধাদের মধ্যে এখনো কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।’
গত বুধবার ইসরায়েল স্থল অভিযানও শুরু করে। এর আগে, ১৯শে জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েলি বাহিনী একাধিকবার তা লঙ্ঘন করেছে।
গত ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে আক্রমণ শুরুর পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রায় ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ওই হামলায় ১,১৩৯ জন ইসরায়েলি নিহত হয় এবং প্রায় ২৫০ জনকে বন্দী করা হয়।
তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই পরে মুক্তি পেয়েছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস এখনো যাদের বন্দী করে রেখেছে, তাঁদের মুক্ত করতেই এই সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে।
তবে হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল বন্দীদের জীবন নিয়ে খেলছে। হামাস আরও বলেছে, নেতানিয়াহু যুদ্ধ বন্ধ এবং গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য আলোচনা শুরু করতে রাজি না হওয়ায় তিনিই যুদ্ধবিরতি ভেঙেছেন।
এদিকে, একটি মার্কিন প্রস্তাবের ভিত্তিতে রমজান ও ইহুদিদের পাসওভার উৎসবের পর এপ্রিল মাস পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বহাল রাখার বিষয়ে বিবেচনা করছে হামাস। এতে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে।
অন্যদিকে, শনিবার সীমান্ত থেকে ছোড়া রকেট হামলার জবাবে ইসরায়েল দ্বিতীয় দফায় হামলা চালিয়েছে, যা হিজবুল্লাহর সঙ্গে হওয়া নভেম্বর মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিতে পারে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা টাইর ও তৌলিনে হিজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। সামরিক সূত্র জানায়, লেবানন থেকে উত্তর ইসরায়েলে ছয়টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়, যার মধ্যে তিনটি প্রতিহত করা হয়েছে।
তবে হিজবুল্লাহ এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, ইসরায়েলের অভিযোগগুলো ‘লেবাননে তাদের ধারাবাহিক হামলার অজুহাত’। হিজবুল্লাহ আরও বলেছে, ‘লেবাননের ওপর এই বিপজ্জনক জবরদখল মোকাবিলায় তারা লেবানন রাষ্ট্রের সঙ্গে রয়েছে।’
ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে লেবাননে অন্তত সাতজন নিহত এবং ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা