ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্বজুড়ে আমেরিকানদের নিয়ে বাড়ছে আলোচনা, উদ্বেগে প্রবাসীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসে ফেরার পর বিশ্বজুড়ে আমেরিকান নাগরিকদের নিয়ে আলোচনা যেন নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী আমেরিকানদের এখন প্রায়ই শুনতে হচ্ছে, ‘ট্রাম্পের এই সময়ে আপনি কি একজন আমেরিকান?’
তাদের অনেকেই বলছেন, এই প্রশ্নটি এখন প্রতিটি কথোপকথনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ইউরোপ এবং ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলোতে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে এক আমেরিকান ছাত্রী মারি সান্তোস জানান, ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের কয়েকদিন পরেই এক ডাক্তারের সঙ্গে তার দেখা হয়। ডাক্তার তার শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে কথা বলার আগে সরাসরি মন্তব্য করেন, ‘এই সময়ে একজন আমেরিকান হওয়াটা বেশ ইন্টারেস্টিং, তাই না?’
সান্তোসের জ্বর ছিল ১০৪ ডিগ্রি, কিন্তু তার অসুস্থতার থেকেও যেন বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল ট্রাম্প প্রসঙ্গ।
ফ্রান্সে বসবাস করেন এমন একজন আমেরিকান নাগরিক, অ্যান্থনি মুসিয়া। তিনি জানান, আগে যখন কেউ জানতে চাইত তিনি কোথা থেকে এসেছেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার ফ্রান্স আসার কারণ জানতে চাইত।
কিন্তু এখন প্রথম প্রশ্নটাই হয়, ‘এখন ফ্রান্সে থাকতে ভালো লাগছে তো?’ এমন প্রশ্নে তিনি খানিকটা বিব্রত বোধ করেন। তার মনে হয়, যেন এমন একটি বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে যা কিছুটা ‘লজ্জাজনক’।
ট্রাম্পের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং মন্তব্য—যেমন গ্রিনল্যান্ডকে ডেনমার্ক থেকে ‘ফেরত নেওয়া’, পানামার দখল নেওয়া, কানাডাকে ৫১তম মার্কিন রাজ্য বানানোর ইচ্ছার কথা বলা—বহু আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
সেই সঙ্গে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং বিভিন্ন দেশে শুল্ক আরোপের মতো ঘটনাগুলোও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক দেশে ট্রাম্পের সঙ্গে এলন মাস্ক এবং টেসলার সম্পর্কের কারণেও মার্কিন পণ্য বয়কটের প্রবণতা বাড়ছে।
আরেকজন আমেরিকান, যিনি নিউজিল্যান্ডে বসবাস করেন, জেইক ল্যাম্ব। তিনি জানান, গত এক বছরে তার প্রতি মানুষের প্রশ্নে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সেখানকার মানুষ বন্ধুত্বপূর্ণ হলেও, ট্রাম্পের কারণে কোনো সংঘাত সৃষ্টি হলে তাকে ‘লুকিয়ে রাখতে’ বা ‘ভালো’ আমেরিকান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে হয় কিনা—এমন আলোচনাও হয়।
কানাডার অটোয়ায় বসবাসকারী এবং রিপাবলিকানদের কান্ডারী জিয়র্জিয়ান বার্ক জানান, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এবং কানাডাকে নিয়ে করা মন্তব্যের কারণে সবাই বেশ উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ইরাক যুদ্ধের সময় আমেরিকানদের নিয়ে সমালোচনা হলেও, এখনকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এখনকার আলোচনা অনেক বেশি ব্যক্তিগত হয়ে উঠেছে।
তবে, সব আমেরিকান প্রবাসীর অভিজ্ঞতা কিন্তু এক রকম নয়। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী রিপাবলিকানদের নেতা গ্রেগ সোয়েনসন মনে করেন, একজন আমেরিকান হিসেবে বিদেশে থাকাটা এখনো পর্যন্ত ইতিবাচক।
যদিও তিনি স্বীকার করেন, ট্রাম্পের কিছু আচরণ ‘অবিবেচনাপূর্ণ’। কিন্তু তিনি মনে করেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ট্রাম্প এবং আমেরিকার ভাবমূর্তি এখনো বেশ ভালো।
সামাজিক মাধ্যম এবং অন্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে অনেক দেশের মানুষজন আমেরিকানদের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী এবং কিছুটা উদ্বিগ্নও। সম্প্রতি, আয়ারল্যান্ডে বসবাস করা এক ব্যক্তি তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন, সেখানে তার পরিবারকে ভালোভাবে গ্রহণ করা হবে কিনা।
এর উত্তরে একজন আইরিশ নাগরিক জানান, অনেক আইরিশ নাগরিক এখন যুক্তরাষ্ট্র এবং আমেরিকানদের প্রতি হতাশ এবং ক্ষুব্ধ।
সবকিছু বিবেচনা করে বলা যায়, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্বজুড়ে আমেরিকানদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বাড়ছে। তাদের পররাষ্ট্রনীতি এবং অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কারণে প্রবাসীদের অভিজ্ঞতাও বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস