যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি ভেনেজুয়েলা থেকে তেল ও গ্যাস ক্রয়কারী দেশগুলোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। এই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে, যারা এখনো ভেনেজুয়েলার তেল আমদানি করে থাকে।
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেছেন, ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি “শত্রুভাবাপন্ন” আচরণ করেছে। এই কারণে, যেসব দেশ ভেনেজুয়েলা থেকে তেল কিনবে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এই শুল্ক দিতে হবে। আগামী ২ এপ্রিল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক চীনের মতো দেশগুলোর জন্য বড় ধরনের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার মোট তেল রপ্তানির ৬৮ শতাংশই কিনেছিল চীন।
এছাড়াও, স্পেন, ভারত, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোও ভেনেজুয়েলার তেল কেনে।
আশ্চর্যজনকভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের পরেও দেশটি এখনো ভেনেজুয়েলার তেল কেনা বন্ধ করেনি। এমনকি, মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৮৬ লাখ ব্যারেল তেল ভেনেজুয়েলা থেকে আমদানি করেছে।
তবে, এই পরিস্থিতিতেও মার্কিন কোম্পানি শেভরনের (Chevron) জন্য ভেনেজুয়েলা থেকে তেল উত্তোলন ও রপ্তানির অনুমতি আরও বাড়িয়েছে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ। এই ছাড়ের মেয়াদ আগামী ২৭ মে পর্যন্ত বহাল থাকবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। তিনি এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনখাতে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাইছেন।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান হুন্দাই ঘোষণা করেছে, তারা লুইজিয়ানায় ৫৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগে একটি স্টিল কারখানা স্থাপন করবে। ট্রাম্প এটিকে তার শুল্ক নীতির সাফল্যের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
ট্রাম্পের এই শুল্ক প্রস্তাবের ফলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে, মাদক পাচার বন্ধ করতে ট্রাম্প প্রশাসন চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল।
এর সঙ্গে নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হলে, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়বে।
এছাড়াও, ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধেও আলাদা শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন। তাঁর অভিযোগ, দেশটির ‘ট्रेन দে আরুয়া’ নামে একটি গ্যাংয়ের সদস্যরা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে।
এই গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত অভিবাসীদের বিতাড়িত করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা আগের চেয়ে সুনির্দিষ্ট হতে পারে।
তবে, বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস