যুক্তরাষ্ট্রে কর্মীদের জন্য বেতনসহ চিকিৎসা বা অসুস্থতাজনিত ছুটির বিধান বাড়ছে। বিভিন্ন রাজ্যে এই ধরনের আইন প্রণয়ন বা করার প্রস্তাব আসছে, যা কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক হবে। তবে, এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে, বিশেষ করে ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রে।
হানা জোনস নামের এক নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারের কঠিন চিকিৎসা সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন, যার পেছনে ছিল তাঁর কর্মস্থলের দেওয়া বেতনসহ চিকিৎসা ছুটি। এই ছুটির কারণে তিনি কেমোথেরাপি এবং অস্ত্রোপচারের জন্য সময় বের করতে পেরেছেন। চিকিৎসকেরা দ্রুত চিকিৎসার কথা বলেছিলেন, যা তিনি এই ছুটির কারণে নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, “আমি ক্যান্সার মুক্ত, কারণ আমি চিকিৎসার পরিকল্পনা অনুসরণ করতে পেরেছি। বেতনসহ ছুটি একজন ক্যান্সার রোগীর জীবন ও সুস্থতার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আমি তার প্রমাণ।”
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যেই কর্মীদের জন্য বেতনসহ অসুস্থতাজনিত ছুটি বা চিকিৎসা ছুটি বাধ্যতামূলক করার আইন তৈরি হচ্ছে। কর্মীদের অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো বলছে, এই ধরনের আইন কর্মীদের আর্থিক চাপ কমায় এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য, এটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন আইনের কারণে জটিলতাও সৃষ্টি হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত কর্মীদের জন্য দুই ধরনের ছুটির বিধান দেখা যায়। প্রথমটি হলো পরিবার ও চিকিৎসা বিষয়ক ছুটি, যা কর্মীদের অসুস্থতা বা পরিবারের কোনো সদস্যের অসুস্থতার সময় চিকিৎসা এবং পরিচর্যার জন্য দেওয়া হয়। দ্বিতীয়টি হলো অসুস্থতাজনিত ছুটি, যা স্বল্পমেয়াদী অসুস্থতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অনেক রাজ্যে, এমনকি কিছু শহরেও এই ধরনের ছুটির বিধান রয়েছে। ন্যাশনাল পার্টনারশিপ ফর উইমেন অ্যান্ড ফ্যামিলিজের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৯টি রাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসি-তে অসুস্থতাজনিত ছুটির আইন রয়েছে।
এছাড়া, ১৭টি শহর ও ৪টি কাউন্টিতেও এই ধরনের আইন কার্যকর আছে। তবে, দীর্ঘমেয়াদী পরিবার ও চিকিৎসা বিষয়ক ছুটির বিধান এখনো অনেক কম রাজ্যে দেখা যায়। এই ধরনের ছুটির বিস্তারিত নিয়মকানুন রাজ্য ভেদে ভিন্ন হতে পারে।
যেমন, কিছু রাজ্যে কর্মীদের এই ধরনের ছুটিতে আংশিক বেতন দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া, কর্মীদের জন্য প্রসবকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ছুটি এবং পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়া কর্মীদের জন্যও ছুটির বিধান তৈরি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে কর্মীদের জন্য বেতনসহ ছুটির বিষয়ে কোনো ফেডারেল আইন নেই। এখানে কর্মীদের জন্য শুধুমাত্র “ফ্যামিলি অ্যান্ড মেডিকেল লিভ অ্যাক্ট” (Family and Medical Leave Act) নামে একটি আইন রয়েছে, যেখানে বিনা বেতনে কিছু ছুটি পাওয়ার সুযোগ আছে। তবে, এই আইন ছোট ব্যবসার কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার ইউসিএলএ-র ওয়ার্ল্ড পলিসি অ্যানালাইসিস সেন্টারের অ্যালেটা স্প্রাগের মতে, এই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বে “প্রধান ব্যতিক্রম” করে তুলেছে। তাঁর মতে, বিশ্বের ৯৫ শতাংশ দেশ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিষয়ক কারণে কর্মীদের জন্য কিছু না কিছু বেতনসহ ছুটির ব্যবস্থা করে থাকে।
উন্নত দেশগুলোতে এই ছুটির পরিমাণ বেশ উল্লেখযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রে বেতনসহ ছুটির পক্ষে যুক্তি হলো, এটি রোগ বিস্তারের ঝুঁকি কমায়। অসুস্থ অবস্থায় কাজে যোগ দেওয়ার প্রবণতা (presenteeism) হ্রাস করে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে।
এছাড়া, দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতার ক্ষেত্রে, কর্মীরা তাঁদের চিকিৎসার উপর মনোযোগ দিতে পারেন। অন্যদিকে, এই আইনের কিছু সমস্যাও রয়েছে। আলাস্কার একটি ছোট ক্যাটারিং ব্যবসার মালিক স্কাই নেভাডা তাঁর ব্যবসার জন্য ৩০ থেকে ৪০ জন অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন, কারণ তিনি নতুন বেতনসহ অসুস্থতাজনিত ছুটির আইনটি সামলাতে পারবেন না।
নেভাডার মতে, কোনো কর্মী অসুস্থ হলে তাঁকে বেতন দিতে হবে এবং তাঁর পরিবর্তে অন্য কাউকে নিয়োগ করতে হবে, যার ফলে অতিরিক্ত খরচ হবে। ছোট ব্যবসার মালিকদের জন্য এই ধরনের খরচ বহন করা কঠিন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন আইন থাকার কারণে বহু রাজ্যে ব্যবসা পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর জন্য বিষয়টি বেশ জটিল হয়ে দাঁড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রে যদিও ফেডারেল পর্যায়ে কর্মীদের জন্য বেতনসহ ছুটির কোনো আইন নেই, তবে বিভিন্ন রাজ্যে এর পক্ষে জনমত বাড়ছে। মিসৌরি, নেব্রাস্কা এবং আলাস্কার মতো রাজ্যগুলোতে এরই মধ্যে বেতনসহ অসুস্থতাজনিত ছুটির আইন পাস হয়েছে। ন্যাশনাল কনফারেন্স অব স্টেট লেজিসলেচারের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত সাতটি রাজ্যে পরিবার ও চিকিৎসা বিষয়ক ছুটির আইন তৈরির বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে কর্মীদের জন্য বেতনসহ ছুটির প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি অনুভূত হচ্ছে। তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস