**যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াটারবারিতে (Waterbury) এক ব্যক্তির ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বন্দী থাকার অভিযোগ, শহরজুড়ে চাঞ্চল্য**
যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের ওয়াটারবুরি শহরে এক ব্যক্তির ২০ বছরের বেশি সময় ধরে নিজের সৎ মায়ের কাছে বন্দী থাকার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি, ৩২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একটি অগ্নিকাণ্ডের মাধ্যমে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসেন। এরপরই পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে এবং শহরজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, পালিয়ে আসা ওই ব্যক্তির সৎ মা ৫৬ বছর বয়সী কিম্বার্লি সুলিভানকে (Kimberly Sullivan) পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অপহরণ, নির্যাতন ও নিষ্ঠুর আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত আছেন এবং আগামী বুধবার তাঁর শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। তবে, সুলিভানের আইনজীবীরা তাঁর মক্কেলের নির্দোষিতা দাবি করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বাড়িটি বাইরে থেকে খুবই সাধারণ একটি বাড়ির মতো ছিল। কিন্তু ভেতরের ঘটনা ছিল কল্পনার বাইরে। প্রতিবেশী মার্ভিন ম্যাককালাফ (Marvin McCullough) জানান, তিনি কখনো বুঝতে পারেননি যে ওই বাড়িতে এমন কিছু ঘটতে পারে। তিনি বলেন, বাড়ির লোকজন সাধারণত নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে থাকতেন।
ওয়াটারবুরির মেয়র পল কে. পেরনেরেস্কি (Paul K. Pernerewski Jr.) জানিয়েছেন, ঘটনাটি খুবই হৃদয়বিদারক। তিনি আরও বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি ছেলেটির ব্যাপারে কয়েক বছর আগেই স্কুল কর্তৃপক্ষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।” জানা গেছে, ছেলেটি যখন বার্নার্ড এলিমেন্টারি স্কুলে পড়ত, তখন সেখানকার শিক্ষকরা তার স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে শিশু ও পরিবার বিষয়ক বিভাগে (Department of Children and Families) একাধিকবার অভিযোগ করেছিলেন।
ঘটনার পর শহরের মানুষজন ওই ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে। স্থানীয় একটি অলাভজনক সংস্থা ‘সেফ হ্যাভেন অফ গ্রেটার ওয়াটারবুরি’ (Safe Haven of Greater Waterbury) এরই মধ্যে তাঁকে সাহায্য করার জন্য ১৩৪,০০০ ডলারের বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছে।
স্থানীয় দমকল বিভাগের ডেপুটি চিফ বব স্টোকার্ট (Bob Stoeckert) জানান, অগ্নিকাণ্ডের সময় উদ্ধারকারীরা যখন ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে, তখন তাঁর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তাঁর ওজন ছিল মাত্র ৬৮ পাউন্ড।
ওয়াটারবুরির পুলিশ প্রধান ফার্নান্দো স্পাগনলো (Fernando Spagnolo) জানিয়েছেন, তাঁরা ঘটনার তদন্ত করছেন এবং ভুক্তভোগীকে সব ধরনের সহায়তা করছেন। তিনি বলেন, “আমাদের কাজ হলো এই শহরের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই ঘটনায় আমরা হয়তো আমাদের দায়িত্ব পালনে কিছুটা ব্যর্থ হয়েছি।”
এই ঘটনার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কীভাবে দিনের পর দিন এমন একটি ঘটনা কারও নজরে আসেনি। স্থানীয় প্রশাসন এবং সমাজকর্মীরা এখন শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও সচেতন হওয়ার কথা বলছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)।