ফ্রান্সের অর্লিয়েন্স শহরের প্রধান রাব্বিকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ এক ইহুদিবিদ্বেষী হামলার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সন্ধ্যায় রাব্বি আরিয়ে এঙ্গেলবার্গ তার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে শহর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এই হামলার শিকার হন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং এটিকে ‘ইহুদিবিদ্বেষের বিষ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ফরাসি কর্তৃপক্ষের মতে, ঘটনাটি একটি ঘৃণ্য অপরাধ, যা ইহুদিবিদ্বেষের কারণে সংঘটিত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারী রাব্বিকে লক্ষ্য করে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য ছুড়ে মারে এবং পরে তার ওপর শারীরিক আক্রমণ করে।
ঘটনার পরপরই হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে একটি মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “অরলিয়েন্সে রাব্বি আরিয়ে এঙ্গেলবার্গের ওপর হামলা আমাদের সকলের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। আমি তাকে, তার ছেলেকে এবং ফরাসি ইহুদি সম্প্রদায়ের সকল সদস্যকে আমাদের সমর্থন জানাচ্ছি। আমরা নীরবতা বা নিষ্ক্রিয়তা মেনে নেব না।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিনও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং বলেছেন, “ফ্রান্স কোনোভাবেই দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি বিভেদকে উস্কে দিতে পারে না, যা সহিংসতা ও ইহুদিবিদ্বেষকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
ফ্রান্সে বর্তমানে প্রায় ৫ লক্ষ ইহুদির বসবাস, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ। এই সংখ্যা ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরেই বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম ইহুদি জনসংখ্যার দেশ হলো ফ্রান্স।
তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের পর থেকে ফ্রান্সে ইহুদিবিদ্বেষের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৩ সালে, ৭ অক্টোবরের হামাসের আক্রমণের পর থেকে ইহুদিবিদ্বেষী ঘটনাগুলো আরও বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শারীরিক নিগ্রহ, হুমকি, ভাঙচুর এবং হয়রানির মতো ঘটনা।
ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১,৫৭০টি ইহুদিবিদ্বেষী ঘটনার রেকর্ড করা হয়েছে, যা ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে সংঘটিত হওয়া মোট অপরাধের ৬২ শতাংশ। যদিও আগের বছরের তুলনায় এটি ৬ শতাংশ কম, তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এই ঘটনার ৬৫ শতাংশই সরাসরি ব্যক্তি-আক্রমণ সম্পর্কিত।
যেখানে অন্যান্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষমূলক ঘটনা সাধারণত সম্পত্তির ক্ষতিসাধন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে।
ফরাসি ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতারা এই পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, ইহুদিবিদ্বেষ কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।
তথ্য সূত্র: সিএনএন