কাতার মরুভূমির প্রান্তে এক টুকরো ভেনিস!
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার, যা বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য একটি পরিচিত গন্তব্য, বর্তমানে উন্নয়নের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। দেশটির রাজধানী দোহা’র কাছে অবস্থিত “দ্য পার্ল” নামের একটি কৃত্রিম দ্বীপ, যা শুধু একটি আবাসস্থলই নয়, বরং আধুনিক নগর পরিকল্পনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
প্রায় ২০ বছর আগে নির্মিত, এই দ্বীপটি যেন মরুভূমির বুকে ভেনিসের প্রতিচ্ছবি। একদিকে যেমন এখানকার রঙিন ভবনগুলো ভেনিসের কথা মনে করায়, তেমনই আবার অত্যাধুনিক নৌবন্দরগুলোতে দেখা মেলে বিলাসবহুল নৌকার ঝলক। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য এখানে রয়েছে “ফ্রিহোল্ড ওনারশিপ”-এর সুযোগ, যা এটিকে করে তুলেছে আরও আকর্ষণীয়।
“দ্য পার্ল”-এর ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে একদিকে যেমন ভেনিস এবং অন্যদিকে আরবীয় স্থাপত্যের মিশ্রণে। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের আবাসিক এলাকা, যেমন – পোর্তো আরাবিয়া, ভিভা বাহরিয়া, কানাত কোয়ার্টার এবং ফ্লোরেস্টা গার্ডেনস। প্রতিটি এলাকার রয়েছে নিজস্ব স্থাপত্যশৈলী, যা এই দ্বীপটিকে দিয়েছে ভিন্নতা।
কানাত কোয়ার্টার-এ রয়েছে ভেনিসের আদলে তৈরি খাল এবং একটি “রিয়্যালটো ব্রিজ”। এছাড়াও, এখানে রয়েছে কেনাকাটার জন্য বিভিন্ন দোকান, ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, বিনোদন কেন্দ্র এবং আধুনিক সব সুবিধা।
দ্বীপটির নির্মাণে পরিবেশ সুরক্ষার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। এখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রয়েছে বিশাল পুনর্ব্যবহার কেন্দ্র। এছাড়াও, এখানকার পার্ক ও উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন পাখির আনাগোনা দেখা যায়।
পরিবেশবিদ ইউসুফ আলহোর-এর মতে, এখানকার শক্তি-সাশ্রয়ী ব্যবস্থা, যেমন – কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, এই দ্বীপটিকে দিয়েছে ভিন্নতা।
“দ্য পার্ল”-এর বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা খুবই আকর্ষণীয়। আলজেরিয়ার ইনসাফ বেনাজাইদ-এর মতে, এখানকার সুন্দর পরিবেশ এবং পারিবারিক বিনোদনের সুযোগের কারণে তিনি এখানে থাকতে পছন্দ করেন।
লেবাননের মিরনা সায়েফানের মতে, এখানকার আধুনিক জীবনযাত্রা খুবই আরামদায়ক। দ্বীপটিতে বসবাসকারীদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য রয়েছে একটি “টাউন সেন্টার”, যেখানে সুপারমার্কেট, সিনেমা হল, হাসপাতাল, স্কুল সহ সবকিছু হাতের কাছেই পাওয়া যায়।
“দ্য পার্ল”-এর মূল আকর্ষণ সম্ভবত এর “ওয়াকএবিলিটি”, যা আধুনিক শহরগুলোতে খুব একটা দেখা যায় না। এখানে বাসিন্দারা হেঁটে বা সাইকেলে তাদের গন্তব্যে যেতে পারেন, যা শহরটিকে আরও বাসযোগ্য করে তুলেছে।
কাতার-এর এই দ্বীপটি, আধুনিক নগর পরিকল্পনা এবং উন্নয়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। উন্নত বিশ্বের এই মডেলটি বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
তথ্য সূত্র: CNN