**তুর্কিতে বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে আটকের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, ১৪০০ জনের বেশি আটক**
তুরস্কে বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ইস্তাম্বুলের মেয়র একরাম ইমামোগলুর কারাবাসের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।
এর জের ধরে নিরাপত্তা বাহিনী ১৪০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে।
শুধু তাই নয়, বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া বেশ কয়েকজন সাংবাদিককেও আটক করা হয়েছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির একজন ফটোসাংবাদিক সহ মোট সাতজন সাংবাদিককে আটকের খবর পাওয়া গেছে।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে চলা এই বিক্ষোভকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়ারলিকায়া এক বিবৃতিতে জানান, বর্তমানে ৯৭৯ জন সন্দেহভাজনকে হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং যাদের মধ্যে ৪৭৮ জনকে আজ আদালতে তোলা হবে।
তিনি আরও বলেন, “যারা রাস্তায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইছে, আমাদের জাতীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের উপর আঘাত হানতে চাইছে এবং আমাদের পুলিশ কর্মকর্তাদের উপর হামলা করছে, তাদের কাউকেই কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
ইস্তাম্বুলের মেয়র একরাম ইমামোগলুকে দুর্নীতির অভিযোগে গত সপ্তাহে আটক করা হয়।
তার এই আটকের ঘটনাকে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন অনেকে।
ইমামোগলু নিজেও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে, বিক্ষোভের কারণে তুরস্কের বিভিন্ন শহরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কিছু রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং বিক্ষোভ প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের আটকের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র পক্ষ থেকে তাদের ফটোসাংবাদিক ইয়াসিন আকিউলের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।
এএফপির চেয়ারম্যান ফ্যাব্রিস ফ্রাইস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ইয়াসিন আকিউল বিক্ষোভের অংশ ছিলেন না।
তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে ঘটনার খবর সংগ্রহ করছিলেন।”
গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।
‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’-এর মতে, তুরস্ক সরকার দেশটির প্রায় ৯০ শতাংশ জাতীয় গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে।
এছাড়াও, সাংবাদিকদের প্রেস পাস বাতিল করার মতো ঘটনা সেখানে প্রায়ই ঘটে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ফ্রিডম হাউস’ তুরস্ককে ইন্টারনেট ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ‘মুক্ত নয়’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তাদের মতে, ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন আইন সেন্সরশিপ বৃদ্ধি এবং অনলাইন মতপ্রকাশকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে।
উল্লেখ্য, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ২০০৩ সাল থেকে দেশটির ক্ষমতায় রয়েছেন।
প্রথমে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৪ সাল থেকে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৭ সালে এরদোগানের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
অন্যদিকে, তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) শনিবার ইস্তাম্বুলে একটি সমাবেশের আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন