গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আল জাজিরা মুবাশির-এর সাংবাদিক হোসাম শাবাতের শোকাহত পরিবার।
গাজার বুকে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন আল জাজিরা মুবাশির-এর সাংবাদিক হোসাম শabat। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবারে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করা এই সাহসী সাংবাদিকের আত্মত্যাগে ব্যথিত স্বজনদের কান্না যেন থামছেই না।
হোসামের মা আমাল শাবাত এখনও তাঁর ছেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, “আমার ছেলে শহীদ হয়েছে, হোসাম…আমার ছেলে বীর।
শোকের আবহাওয়ায় আত্মীয়-স্বজনের মাঝে বসে তিনি অসহায়ভাবে চোখের জল ফেলছেন। স্বজনরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, বলছেন হোসাম ছিলেন সকলের প্রিয় এবং একজন বীর।
হোসাম শুধু সাংবাদিকতা করেননি, বরং দুর্গত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতেও সাহায্য করতেন। তাঁর পরিবার জানায়, যারা সরাসরি ত্রাণ পাচ্ছিল না, হোসাম তাদের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিতেন।
হোসামের ভাই মাহমুদ জানান, তাঁর ভাই সব সময় বলতেন, “যুদ্ধ-সংবাদ পরিবেশন চলতেই থাকবে, মৃত্যুর বিনিময়ে হলেও।” তিনি আরও বলেন, “যদি কোনো গণহত্যা হয় আর তা কেউ নথিভুক্ত না করে, তবে সেটি যেন ঘটেইনি।
ডিসেম্বরের শেষের দিকে যখন পরিবারটি গাজার উত্তরে তাদের বাড়ি থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল, তখন হোসাম সেখানে থেকে যান, কারণ তিনি জানতেন, খবর প্রচার না হলে সহিংসতার কথা চাপা পড়ে যাবে। এরপর একটি যুদ্ধবিরতির পরে পরিবারটি যখন গাজা শহরে ফিরে আসে, তখন হোসামের সঙ্গে তাদের দেখা হয়।
কিন্তু আমাল জানান, তখনও ছেলের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো কঠিন ছিল। তিনি প্রায়ই যেখানে হোসাম কাজ করতেন, সেখানে যেতেন।
হোসামের সহকর্মীরা আল জাজিরার আরবি সাইটে তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, তিনি ছিলেন ভালোবাসায় ভরপুর একজন মানুষ, যিনি সবসময় মানুষের পাশে থাকতেন। তাঁর ক্যামেরার মাধ্যমে তিনি মানুষের দুঃখ-কষ্ট তুলে ধরতেন।
আশ্রয়কেন্দ্র ও তাঁবুতে থাকা মানুষগুলোর প্রতি তাঁর ছিল গভীর সহানুভূতি।
সহকর্মী ইউসুফ ফারেস বলেন, অন্য সাংবাদিকরা পর্যন্ত তাঁকে সাবধানে কাজ করতে বলতেন। কারণ, হোসাম ছিলেন অত্যন্ত নির্ভীক এবং সব সময় ঝুঁকির মধ্যে ছুটে যেতেন।
মাহমুদ বলেন, হোসাম চেয়েছিলেন পুরো সত্যটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে। তিনি সব সময় বলতেন, “সংবাদ পরিবেশন চলবেই, মৃত্যুর ঝুঁকি থাকলেও।
হোসামের পরিবার বাস্তুচ্যুত হওয়ার সময় উদ্বিগ্ন ছিল। তাঁদের মধ্যে প্রায়ই আলোচনা হতো, যদি হোসাম মারা যায়, তাহলে কী হবে।
মাহমুদ বলেন, “আমরা তখন একটি তাঁবুতে হোসামের জন্য ‘দার আযা’ (শোকসভা) আয়োজন করার কথা ভাবছিলাম।
তিনি আরও বলেন, “আমরা সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই যে, আমরা ফিরে আসতে পেরেছিলাম এবং অন্তত ৩০-৪০ দিন তাঁর সঙ্গে থাকতে পেরেছিলাম। আমি কৃতজ্ঞ যে, আমি তাঁর জানাজায় অংশ নিতে পেরেছি এবং তাঁকে দাফন করতে পেরেছি।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা