মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য আইনসভাগুলোতে নারীদের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির অভিযোগ কি কমছে? #MeToo আন্দোলনের ঢেউ আসার পরও কি তারা নিরাপদ বোধ করছেন? সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৪৪টি রাজ্যের ১৪৭ জন আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি বা অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ পদত্যাগ করেছেন অথবা তাদের অফিস থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আরো এক তৃতীয়াংশ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন। এমনকি গভর্নর ও অ্যাটর্নি জেনারেলসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদেরও যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হয়েছে, যাদের অধিকাংশই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
ভার্জিনিয়ার আইনপ্রণেতা জ্যাকি গ্লাস এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি যখন আইনসভায় যোগ দিয়েছিলাম, তখন আমাকে ‘নিরাপত্তা বিষয়ক ব্রিফিং’ দেওয়া হয়েছিল।
সেখানে বলা হয়েছিল, কাদের সঙ্গে মদ্যপান করা যাবে না, কার সঙ্গে একা থাকা যাবে না এবং কাদের থেকে সাবধানে থাকতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমার মনে হয়, আপনি (স্পিকার) সেই ব্রিফিং পাননি।”
গ্লাসের এই মন্তব্যের মাধ্যমে আইনসভায় যৌন অসদাচরণের একটি গভীর সংস্কৃতির চিত্র ফুটে ওঠে, যা #MeToo আন্দোলন শুরুর পরও বিদ্যমান।
#MeToo আন্দোলনের ফলে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের পদ হারিয়েছেন। অনেক পুরোনো অভিযোগ নতুন করে সামনে এসেছে, যা কর্মক্ষেত্রে বিদ্যমান একটি বিষাক্ত সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি।
এই ধরনের আচরণ সেখানে হয়তো স্বাভাবিক ছিল, যা আগে নীরবে ঢাকা দেওয়া হতো।
অনেক রাজ্যে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য নতুন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে বা বিদ্যমান নীতিগুলোর সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে, রাজ্যের আইনসভায় নারীদের সংখ্যা বাড়ছে, অনেকে বলছেন, এর ফলে আইনসভাগুলো ‘পুরুষতান্ত্রিক ক্লাব’ থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাচ্ছে।
তবে, অভিযোগ এখনো উঠছে। নেভাডা রাজ্যের আইনসভা যৌন হয়রানির সংজ্ঞায় ‘দৃষ্টি সম্পর্কিত’ আচরণ, যেমন—বিদ্রূপাত্মক ছবি বা অঙ্গভঙ্গি অন্তর্ভুক্ত করেছে।
কেন্টাকি জেনারেল অ্যাসেম্বলি ‘নৈতিক অসদাচরণ’-এর তালিকায় যৌন হয়রানি যুক্ত করেছে। যদিও অনেক রাজ্যে নতুন নীতি ও প্রশিক্ষণ চালু হয়েছে, তবে সবসময় তা স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হয় না।
ওকলাহোমা সিনেট এবং ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার আইনসভা তাদের যৌন হয়রানি বিষয়ক নীতি এপির কাছে সরবরাহ করতে রাজি হয়নি।
পেনসিলভানিয়ার রিপাবলিকান প্রতিনিধি অ্যাবি মেজর বলেন, সম্প্রতি হওয়া যৌন হয়রানির কেলেঙ্কারির পর পুরুষ সহকর্মীরা নারীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছেন।
তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, পুরুষরা এখন কিছুটা ভীত—যদি কিছু করে বসি, তাহলে আমি হয়তো তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করব।”
মিশিগান ডেমোক্রেটিক স্টেট সেনেটর ম্যালোরি ম্যাকমরো মনে করেন, নীতি পরিবর্তনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো—বর্তমানে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন, যার ফলে আইনসভার কার্যক্রমে পরিবর্তন এসেছে।
তবে, অনেক নারী এখনো কর্মক্ষেত্রে বিদ্যমান এই বৈষম্য অনুভব করেন। জর্জিয়ার স্টেট প্রতিনিধি শিয়া রবার্টস বলেন, “কখনও কখনও মনে হয়, আমাদের শুধু হাসতে হবে এবং কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করা যাবে না।”
যৌন হয়রানির অভিযোগ করলে অনেক সময় ভুক্তভোগীকে নানা ধরনের প্রতিকূলতার শিকার হতে হয়। ন্যাশনাল উইমেনস ডিফেন্স লীগের প্রতিষ্ঠাতা এমা ডেভিডসন ট্রিবিস বলেন, “এটি একটি রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্র, তাই এখানে হয়রানির বিষয়গুলো মূলত রাজনৈতিক।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য একটি নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি জরুরি। এপির জরিপে দেখা গেছে, মাত্র এক চতুর্থাংশ আইনসভায় অভিযোগের তদন্তের জন্য বাইরের সাহায্য নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, #MeToo আন্দোলনের ফলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। তবে, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে, কারণ এটি অল্প সময়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার মতো বিষয় নয়।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস