তুরস্কে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল, ১ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার, সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন।
তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ১,১০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাংবাদিকও রয়েছেন।
বিক্ষোভ দমনের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষের এই ধরপাকড় চলছে। অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’-এর (সাবেক টুইটার) ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে তারা সরকার সমালোচনাকারী কয়েকশ’ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়।
সম্প্রতি, ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামে হাজার হাজার মানুষ।
গত কয়েক দশকের মধ্যে এটি ছিল সরকার বিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জলকামান ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করে।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া জানিয়েছেন, গত পাঁচ দিনে ১,১৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে অনেককে ইস্তাম্বুলে বিক্ষোভ নিষিদ্ধের নিয়ম ভাঙার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরের গভর্নরের পক্ষ থেকে ইস্তাম্বুলে প্রবেশাধিকারও সীমিত করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “কিছু মহল সমাবেশের অধিকারকে abuse করছে, যা জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার চেষ্টা এবং পুলিশের উপর আক্রমণের শামিল।
এসব কার্যক্রম আমাদের জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, সরকার একরেম ইমামোগলুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মানতে নারাজ। প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের পর বিক্ষোভ দমনে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ তুরস্কের জন্য বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, গত এক সপ্তাহে তুর্কি কেন্দ্রীয় ব্যাংক লিরাকে স্থিতিশীল রাখতে প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমান, প্রতি ডলার = ১১০ টাকা ধরে) খরচ করেছে।
অর্থনীতি বিশ্লেষক হালুক বুরুমচেকচি’র মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পরিমাণ অর্থ খরচ করার মতো রিজার্ভ থাকলেও, তা চলমান চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে চলা অর্থনৈতিক সংকট তুরস্কের জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে, যা বিক্ষোভের অন্যতম কারণ।
এদিকে, তুরস্কের পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাজারের অস্থিরতার কারণে তারা স্বল্পমেয়াদী শেয়ার কেনাবেচা এক মাসের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক সংগঠন মিডিয়া অ্যান্ড ল’ স্টাডিজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ইভিন বারিস আলতিনতাস বলেছেন, গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিকদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন চিত্রগ্রাহক।
তিনি বলেন, “বিক্ষোভের ছবি তোলার সংখ্যা কমানোই মূল উদ্দেশ্য।” তিনি আরও জানান, তুরস্কের মিডিয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা আরটিইউকের প্রধান, বিক্ষোভের সরাসরি সম্প্রচার করার কারণে সম্প্রচারকদের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়েছেন।
যদিও আরটিইউকের প্রধান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আলতিনতাসের মতে, সরকারের এই দমননীতি বিক্ষোভের খবর প্রচার বন্ধ করার একটি কৌশল।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার)-এর গ্লোবাল গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স টিম জানিয়েছে, তারা তুরস্ক কর্তৃপক্ষের ৭০০-র বেশি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
এই অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে সংবাদ সংস্থা, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং শিক্ষার্থীও রয়েছেন।
এক্স কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা তাদের প্ল্যাটফর্মে বাক স্বাধীনতা রক্ষা করে। তবে আলতিনতাসের হিসাব অনুযায়ী, তুরস্কে অন্তত ১১০টি অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে।
এদের মধ্যে বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করা সাংবাদিক, নারী অধিকার কর্মী এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনও রয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান