বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে অস্থিরতা: ইউরোপে টেসলার বিক্রি কমে যাওয়া, প্রতিদ্বন্দ্বীদের উত্থান।
বৈদ্যুতিক গাড়ির (Electric Vehicle – EV) বাজারে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি টেসলার (Tesla) ইউরোপের বাজারে বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে ইউরোপে তাদের গাড়ির বিক্রি প্রায় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) ইলন মাস্কের (Elon Musk) রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে তৈরি হওয়া বিতর্ক।
গবেষণা সংস্থা জ্যাটো ডাইনামিক্সের (Jato Dynamics) এর তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে ইউরোপের ২৫টি দেশ, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে এবং সুইজারল্যান্ডে টেসলা প্রায় ১৬,০০০ গাড়ি বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে আগের বছর একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।
শুধু তাই নয়, টেসলার বাজার হিস্যাও কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৬ শতাংশে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বনিম্ন। এর আগে, জানুয়ারি মাসেও টেসলার বিক্রি ৪৫ শতাংশ কমেছিল।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের বাজারে টেসলার বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। সোসাইটি অফ মোটর ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড ট্রেডার্স (Society of Motor Manufacturers and Traders) এর তথ্য অনুসারে, ফেব্রুয়ারিতে নতুন টেসলা গাড়ির নিবন্ধন প্রায় ২১ শতাংশ বেড়েছে।
মডেল ৩ (Model 3) এবং মডেল ওয়াই (Model Y) ছিলো সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গাড়ির মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইলন মাস্কের রাজনৈতিক অবস্থান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) সঙ্গে তার সম্পর্ক অনেক ক্রেতাকে হতাশ করেছে। মাস্ক বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যা ইউরোপের অনেক ক্রেতার কাছে নেতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এর ফলস্বরূপ, টেসলার বিক্রি কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে, টেসলার বিক্রি হ্রাসের পেছনে তাদের জনপ্রিয় মডেল ওয়াই (Model Y) এর পরিবর্তনও একটি কারণ হতে পারে। জ্যাটো ডাইনামিক্সের বৈশ্বিক বিশ্লেষক ফেলিপ মুনোজ (Felipe Munoz) বলেন, “টেসলা বর্তমানে একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ইলন মাস্কের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং ইভি বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার পাশাপাশি, কোম্পানিটি তাদের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া মডেল ওয়াই-এর বিদ্যমান সংস্করণটি পর্যায়ক্রমে তুলে নিচ্ছে।”
টেসলার এই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে অন্যান্য ইভি প্রস্তুতকারক সংস্থা। যেমন, ভক্সওয়াগন (Volkswagen) ব্যাটারিচালিত গাড়ির বিক্রি ১৮০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে এবং তারা প্রায় ২০,০০০ গাড়ি বিক্রি করেছে।
একই সময়ে, বিএমডব্লিউ (BMW) ও মিনি (Mini) সম্মিলিতভাবে ১৯,০০০ এর বেশি ইভি বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে।
চীনের কোম্পানি বিওয়াইডি (BYD) ইউরোপে তাদের বিক্রি ৯৪ শতাংশ বাড়িয়েছে এবং ৪,০০০ এর বেশি গাড়ি বিক্রি করেছে। বিশ্বজুড়ে BYD এর বিক্রিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
গত বছর, বিওয়াইডি-র আয় ছিল প্রায় $১০০ বিলিয়ন (৮৩ বিলিয়ন পাউন্ড)। তারা এখন বিশ্বব্যাপী টেসলার অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, টেসলার এই পরিস্থিতিতে তাদের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে, ইলন মাস্কের রাজনৈতিক বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে হবে এবং গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মনোযোগ দিতে হবে।
একই সঙ্গে, তাদের গাড়ির নতুন মডেলগুলো বাজারে দ্রুত পরিচিত করতে হবে, যাতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যায়।
বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সরকার এই খাতে উৎসাহ যোগানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
টেসলার এই বিক্রয় হ্রাসের ঘটনা বাংলাদেশের বাজারে ইভি’র প্রসারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে পারে। উন্নত প্রযুক্তির ইভি’র দাম এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এখনো অনেক বেশি হওয়ায়, অনেক ক্রেতা এই বিষয়ে দ্বিধা বোধ করেন।
তাই, টেসলার এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে, তাদের পণ্যের দাম এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমানোর দিকে নজর দিতে হবে, যাতে তারা বিশ্ববাজারে তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian