শিরোনাম: “কেমট্রেইল” ষড়যন্ত্রের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে আইন: জলবায়ু গবেষণায় উদ্বেগের সৃষ্টি
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সময়ে ছড়িয়ে পড়া ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো মাঝে মাঝে আলোচনার জন্ম দেয়, এমনকি তা কোনো দেশের আইন তৈরির ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি, “কেমট্রেইল” নামের একটি ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে আইন প্রনয়নের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, উড়োজাহাজগুলো আকাশে রাসায়নিক দ্রব্য ছিটিয়ে দেয়, যা আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটায় এবং জনগণের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
বিষয়টি বিজ্ঞানসম্মতভাবে মিথ্যা প্রমাণিত হলেও, এর ভিত্তিতে আইন তৈরির চেষ্টা উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক গবেষণাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের আইনসভায় ইতোমধ্যে এমন একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে, যেখানে আবহাওয়া পরিবর্তন এবং জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কিত কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবনা রয়েছে। একই ধরনের একটি বিল নিয়ে আলাবামার আইনসভাতেও আলোচনা হয়েছে।
এছাড়াও, এর আগে টেনেসিতেও আকাশে রাসায়নিক দ্রব্য ছড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা সমালোচকদের মতে, “অর্থহীন” একটি পদক্ষেপ।
“কেমট্রেইল” ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মূল ধারণা হলো, উড়োজাহাজ থেকে নির্গত হওয়া সাদা ধোঁয়ার মতো কণাগুলো আসলে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য, যা আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়। তবে, বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, উড়োজাহাজের ইঞ্জিন থেকে নির্গত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে এই ধরনের কণা তৈরি হয়।
এটি মূলত মেঘের একটি অংশ, যা নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কারণে সৃষ্টি হয়।
এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অনুসারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগের প্রধান রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের মতো ব্যক্তিও রয়েছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন, অঙ্গরাজ্যগুলো যখন “আমাদের নাগরিকদের, জলধারা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিষাক্ত করার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে”, তখন এই পদক্ষেপকে সমর্থন করা উচিত।
কেনেডি জুনিয়র এই ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রতি সমর্থন জানানোয় অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জলবায়ু বিষয়ক অর্থনীতিবিদ জার্নট ওয়াগনারের মতে, এই ধরনের তত্ত্বগুলো সমাজের উচ্চপর্যায়ে সমর্থন পেলে তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উত্থানের পেছনে অন্যতম কারণ হলো চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায়, তখন অনেকেই এর কারণ হিসেবে এই ধরনের তত্ত্বকে দায়ী করে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালের ঘূর্ণিঝড় হ্যারিকেন হেলেন এবং মিলটনের ঘটনার পর অনেকে দাবি করেছিলেন, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এই ঝড় তৈরি করেছে।
তবে, বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কমাতে “জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং”-এর মতো বিভিন্ন পদ্ধতির কথা বলছেন। এর মধ্যে অন্যতম একটি পদ্ধতি হলো, সূর্যের আলোকরশ্মিকে প্রতিফলিত করার জন্য বায়ুমণ্ডলে কণা ছড়ানো। কিন্তু “কেমট্রেইল” বিষয়ক আইনের কারণে এসব গবেষণা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। এখানে প্রায়ই ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ও খরা দেখা যায়। তাই, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ও পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
কোনো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ভিত্তিতে আইন তৈরি হলে, তা দেশের উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, তথ্য-প্রযুক্তির যুগে গুজব ও ভিত্তিহীন তত্ত্বগুলো কীভাবে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তথ্যের সত্যতা যাচাই করা এবং বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির অনুসরণ করা অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: সিএনএন