নেটফ্লিক্সের নতুন সিরিজ ‘অ্যাডোলেসেন্স’ মুক্তি পাওয়ার পরেই এর সঙ্গে জড়িত শিল্পী এবং কলাকুশলীদের জীবনে নেমে এসেছে উদ্বেগের ছায়া। ১৩ বছর বয়সী এক কিশোর, যে অনলাইনে ‘ইনসেল’ (incel) মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে সহপাঠীকে খুন করে, সেই ঘটনার প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই সিরিজটি বর্তমানে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কিন্তু সিরিজের নির্মাতা ও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যে ধরনের পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন, তা রীতিমতো আতঙ্কের।
সিরিজটির লেখক জ্যাক থর্ন এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কিভাবে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরার পরে অনলাইনে কটূক্তির শিকার হয়েছিলেন। তাঁর শারীরিক গঠন নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়েছিল, যা অনেকের কাছেই ছিল হতাশাজনক।
শুধু থর্ন নন, এই সিরিজে জড়িত আরও অনেকে তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনে অতিরিক্ত মনোযোগ এবং সমালোচনার শিকার হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের পরিস্থিতি নতুন কিছু নয়। এর আগে ‘মি. বেটস ভার্সেস দ্য পোস্ট অফিস’, এবং ‘বেবি রেইনডিয়ার’-এর মতো আলোচিত সিরিজগুলোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
“বেবি রেইনডিয়ার” -এর ঘটনায়, সিরিজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনলাইনে নানা জনের মন্তব্য এবং হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল। এমনকি, এই সিরিজের বাস্তব চরিত্রদের খুঁজে বের করার জন্য সামাজিক মাধ্যমে যে চেষ্টা চালানো হয়েছিল, তা অনেককে নিরাপত্তাহীন করে তুলেছিল।
পশ্চিমের দেশগুলোতে, বিশেষ করে লস অ্যাঞ্জেলেস এবং নিউইয়র্কের মতো শহরে, যেখানে খ্যাতির বিড়ম্বনা অনেক বেশি, সেখানে তারকারা বডিগার্ড এবং সুরক্ষিত বাড়িতে থাকতে বাধ্য হন।
কিন্তু ‘অ্যাডোলেসেন্স’-এর সঙ্গে জড়িত অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সাধারণ মানুষের মতোই বাসে বা দোকানে যান, যা তাঁদেরকে আরও বেশি অরক্ষিত করে তোলে। তরুণ অভিনয়শিল্পীদের ক্ষেত্রে, স্কুলে যাওয়াটাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
প্রযোজক এবং নির্মাতাদের এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে কীভাবে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। বিশেষ করে, নেটফ্লিক্সের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে, যেখানে একইসঙ্গে বিশ্বজুড়ে একটি সিরিজ মুক্তি পায়, সেখানে জড়িত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বিশিষ্টজনদের মতে, সৃজনশীল জগৎকে আমরা প্রায়শই নিরাপদ মনে করি, যেখানে সমাজের কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
কিন্তু বর্তমানে, এই জগৎও বিভিন্ন মতাদর্শিক বিতর্কের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তাই, শিল্পীদের সুরক্ষা দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
ভবিষ্যতে, নির্মাতাদের নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তাঁদের শিল্পী এবং কলাকুশলীরা সামাজিক মাধ্যম থেকে দূরে থাকেন এবং কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন। কারণ, একটি ভালো কাজ সমাজকে যেমন নতুন দিশা দেখায়, তেমনই এর সঙ্গে জড়িত মানুষের জীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান