মেক্সিকোতে আশ্রয় খোঁজা এলজিবিটিকিউ+ (LGBTQ+) সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ‘কাসা ফ্রিদা’। নিজেদের দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা এই মানুষগুলোর জন্য আশ্রয়স্থল তৈরি করেছে তারা।
কিন্তু সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের কারণে অর্থ সংকটে পড়েছে এই আশ্রয়কেন্দ্রটি। কাসা ফ্রিদার কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এখনো টিকে আছে আশ্রয়কেন্দ্রটি, যেখানে আশ্রয়প্রার্থীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়।
মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলে, বিশেষ করে তাপাচুলা শহরে আশ্রয়প্রার্থীদের আনাগোনা অনেক দিনের। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ নিজেদের লিঙ্গপরিচয় বা যৌন অভিমুখিতার কারণে নিজ দেশে নিপীড়িত হয়ে এখানে আসেন।
এদের আশ্রয় দিতে ২০১৮ সালে মেক্সিকো সিটিতে কাসা ফ্রিদা তৈরি হয়। বর্তমানে তাপাচুলা, মেক্সিকো সিটি এবং মন্টেরিতো’র মতো শহরগুলোতে এর কার্যক্রম চলছে।
কাসা ফ্রিদার কর্মীরা জানান, এখানে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের প্রধান উদ্বেগের কারণ হলো নিজেদের নিরাপত্তা। তাদের আশ্রয়, খাবার এবং আইনি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি সমাজে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতেও সাহায্য করা হয়।
কাসা ফ্রিদার পরিচালক মারিয়ানা দে লা ক্রুজ জানিয়েছেন, শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রধান বাধা হলো অর্থের অভাব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের তহবিলে প্রায় ৬০ শতাংশ ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছি। তবে এই মুহূর্তে টিকে থাকাটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
আশ্রয়প্রার্থীদের একজন আনা এস্কিভেল। কিউবা থেকে পালিয়ে আসা এই ট্রান্সজেন্ডার নারী জানান, নিজের দেশে তিনি প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতেন।
পুলিশের ভয়ে সবসময় আতঙ্কিত থাকতেন তিনি। এস্কিভেল জানান, “আমার মতো মানুষের সেখানে কোনো নিরাপত্তা ছিল না।
সবসময় মনে হতো, এই বুঝি গ্রেপ্তার করা হলো।”
আরেকজন আশ্রয়প্রার্থী ম্যানুয়েল জিমেনেজ। তিনি জানান, পরিবার থেকে বিতাড়িত হয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন কাসা ফ্রিদাতে।
জিমেনেজ বলেন, “এখানে আমি শান্তিতে বাঁচতে পারছি। আমার মতো যারা প্রান্তিক, তাদের জন্য কাসা ফ্রিদা একটা আশ্রয়স্থল।”
কাসা ফ্রিদার কর্মীরা জানান, আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা তাদের লিঙ্গপরিচয় বা যৌন অভিমুখিতার কারণে দেশে সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
কাসা ফ্রিদা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা দিয়ে থাকে। এছাড়া, ইংরেজি ভাষার প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতেও তারা সাহায্য করে।
আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মীরা জানান, যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে সীমান্তে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা কমেছে, তবুও এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর জন্য কাসা ফ্রিদার প্রয়োজনীয়তা এখনো আগের মতোই রয়েছে।
কারণ, সহিংসতার শিকার হওয়া এই মানুষগুলোর জন্য কাসা ফ্রিদা একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস